- 0
- 0
ভারত তার প্রতিশ্রুতি রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেশে আসা নিয়ে তৈরী হয়েছে সংশয়। ভারতের ভ্যাকসিন রপ্তানির এইরকম নিষেধাজ্ঞায় জনমনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।তারপরও সরকারী পর্যায় থেকে চিন্তা না করার জন্য আশ্বস্ত করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বেক্সিমকো দাবি করছেন, সেরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী অনুমোদনের এক মাসের ভিতর দেশে টিকা পাওয়ার কথা থাকায় সেখানে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।কিন্তু বাংলাদেশে ভ্যাক্সিন পাঠানোর ব্যাপারে ভারত এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। এর মধ্যে গতকাল দুপুরে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।
৫ নভেম্বর ৩ কোটি ডোজ টিকা পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। এ চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত ৫০ লাখ করে মোট ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ইপিআই প্রকল্পের মাধ্যমে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার, তৈরি করা হয়েছে অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা। এটুআই প্রকল্পের মাধ্যমে করা হচ্ছে ডাটাবেজ।
গত রবিবার রাতে হঠাৎ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর আসে, নিজেদের চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত ভ্যাকসিন রপ্তানি করবে না ভারত। তাই দিনব্যাপী ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে চলে আলোচনা।
পরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে সেরামের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে সেরাম এখন অন্য দেশে টিকা রপ্তানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, যা পেতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কিন্তু রপ্তানি শুরুর আগেই ভারত সরকারকে সেরাম ১০ কোটি টিকা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমরা রপ্তানি করতে পারব না, যেহেতু রপ্তানির অনুমতি নেই।
সেরামের ভ্যাকসিন দেশে আনতে চুক্তি করা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিতে পরিষ্কার বলা আছে, আমাদের দেশে অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যে তাদের ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। ব্যাংক গ্যারান্টি সরকারের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। সরকারের এটা পৌঁছে দিতে হবে। এখন বাকি আছে রেজিস্ট্রেশন। আমরা তথ্য-উপাত্ত বৃহস্পতিবার জমা দিয়েছি। গতকাল আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে। এখন অনুমোদন কখন দেবে সেটা তাদের ব্যাপার।
তিনি বলেন, চুক্তি যেহেতু হয়ে গেছে এটাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। ভ্যাকসিন নিয়ে আজ (গতকাল) সেরামের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি যে করোনার টিকা আসতে দেরি হতে পারে। সরকার যদি নিয়মকানুন মেনে অনুমোদন দেয়, তাহলে এক মাসের মধ্যে টিকা আসবে। এর নিয়ন্ত্রণের দিকটা বাংলাদেশ সরকারের ওপর নির্ভর করছে। এটা বাণিজ্যিক চুক্তি। আমরা শুধু সরকারকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দেশে এ টিকা আমদানিতে আর কোনো বাধা নেই।
ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় গতকাল সচিবালয়ের সভাকক্ষে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, আমরাও এ বিষয়টি নিয়ে সকাল থেকে কাজ করছি। ইতিমধ্যে বেক্সিমকো ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতে আমাদের মিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমাদের মিশন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। আমরা আশ্বস্ত যে সমস্যা হবে না। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তিকে সম্মান করার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ১২০ মিলিয়ন ডলার তাদের দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, আমি এখনই ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনারকে ফোন করেছিলাম। তিনি আমাদের জানিয়েছেন আমরা যে চুক্তি করেছি তার ফিন্যানশিয়াল কতগুলো ট্রানজেকশন- কীভাবে টাকাটা যাবে, কীভাবে ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। কাজটি হয়েছে জিটুজি বা সরকার টু সরকার। যে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে তা ভারত সরকার বলেছে শুধু কমার্শিয়াল অ্যাকটিভিটিসের ওপর। আমাদের চুক্তির ওপর নয়। কারণ আমাদের চুক্তি সরকার টু সরকার।
তিনি আরো বলেন, কয়েক দিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কথা হয়েছে।৩ কোটি ভ্যাকসিনের কথা কিন্তু তিনিও (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) বলেন, মানে গভর্নমেন্ট (ভারত সরকার) জানে। আরেকটি পয়েন্ট, আমরা যখন এগ্রিমেন্ট করি, ভারতের হাইকমিশনার নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কাজেই আমাদের বিষয়টি হচ্ছে জিটুজি বা সরকার টু সরকার। যে নিষেধাজ্ঞা ভারত সরকার দিয়েছে, সেটি হলো ইন্টারনাল কমার্শিয়াল অ্যাকটিভিটিস হবে না।
গতকাল বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ভ্যাকসিনের বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো ধরনের চিন্তা বা উদ্বেগের কারণ নেই। ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেই হয়েছে এবং বাংলাদেশই প্রথম, যারা এ ভ্যাকসিনের বিষয়ে আগ্রহী হয়েছে। তাই ভারতের কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশকে আরও জানানো হয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত ও প্রিম্যাচিউরড বক্তব্য। এটা ভারত সরকারের কোনো পলিসি নয়। এর আগে ভারতের হাইকমিশনার জানিয়েছেন ভারত নতুন যে ভ্যাকসিন বানাচ্ছে তা এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। তবে এটি জরুরি ভিত্তিতে ভারতে কিছু লোককে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনুমোদন পেলে এটি বাইরে দেওয়া হবে।’ তাহলে ভারত যখন ভ্যাকসিন পাবে, বাংলাদেশও তখন পাবে এমন প্রতিশ্রুতি রক্ষা হবে কি না- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের পুরোপুরি আশ্বস্ত করেছে। তাই এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।