- 0
- 0
বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট মাঠে দাপট দেখাতে পারতেন তারাও

পৃথিবীর সকল মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। সকলেই নিজ নিজ স্বপ্নটাকে পূর্ণ করার চেষ্টাও করে। কেউ কেউ তাদের স্বপ্নটাকে পূর্ণ করতে পারে আবার কেউ পারেনা৷ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার ফলে স্বপ্ন পুরনের মাঝপথ থেকে ফিরে আসে অনেকে। আবার সময়ের সাথে সাথে অনেক মানুষের স্বপ্ন পরিবর্তনও হয়ে যায়৷ আজ আমরা সঙ্গীতাঙ্গনের এমন ৪ জন সম্পর্কে আলোচনা করবো যারা হতে জীবনের প্রথমভাগে হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। তারাও একসময় চেয়েছিলেন ক্রিকেটার হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা কিন্তু তারা তাদের সেই স্বপ্ন পুরন করতে পারেন নাই কিন্তু সেই স্বপ্ন পুরন না করতে পারলেও তারা ঠিকই নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন৷ মাঠে ব্যাট বল হাতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলেও দেশের হয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করছেন। একটি স্বপ্ন পুরন করতে না পারলেই যে জীবন শেষ জয়ে যায় না তারা যেন সেটাই প্রমান করেছেন। সেই সঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে লিখেছেন ফয়সাল আহমেদ শিহাব।
হামিন আহমেদ
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রক ব্যান্ড “মাইলস” এর গিটারিস্ট এবং লিডার হামিন আহমেদ একসময় ছিলেন তুখোড় একজন ক্রিকেটার। ক্লাব পর্যায়ে ছিলেন ধারাবাহিক পারফর্মার। অনেকেই হয়তো জানেনা তিনি জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছিলেন হামিন আহমেদ। জাতীয় দলের ক্যারিয়ার বড় হয়নি তার তারপরও জাতীয় দলে সুযোগ করে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ১৯৭৯ সালে শুরু হয় হামিন আহমেদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক কমল দাশ ও কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগমের ২য় সন্তান হামিন আহমেদ। কমল দাশ মনে প্রানে ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন। মুলত তার আগ্রহেই তিন ছেলে তাহসীন আহমেদ, হামিন আহমেদ এবং শাফিন আহমেদ ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের ফ্যান ছিলেন। বড় ভাই তাহসীন আহমেদের হাত ধরেই মুলত তিনি ক্রিকেটে এসেছিলেন ক্রিকেট দুনিয়ায়। প্রথম দিনেই কোচ কামরুজ্জামানের পছন্দ হয়ে গেল হামিনের ব্যাটিং স্টাইল। তিনি হামিন আহমেদেকে নিয়মিত খেলা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। এভাবেই ১৯৭৯ সালে ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করেছিলেন হামিন আহমেদ। এরপর ঢাকার অনেক ক্লাবে খেলেছেব হামিন আহমেদ। সুর্যতরুন, আজাদ বয়েজ, আবহনী এবং মোহামেডানের হয়েও মাঠ মাতিয়েছেন এই রক স্টার৷ ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের জুনিয়র টিমে সুযোগ পান হামিন আহমেদ। তারপর ১৯৮৬ সালে সুযোগ হয় জাতীয় দলে খেলার। জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮৬ সালে পাকিস্তান সফরও করেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালের আইসিসি ট্রফির দলে ছিলেন হামিন আহমেদ। প্রস্তুতি ম্যাচে সুযোগ পেলেও যায়গা হয়নি মুল টুর্নামেন্টের একাদশে। সেই থেকেই ক্রিকেট থেকে মুলত আগ্রহ হারাতে থাকেন তিনি। ১৯৮৭ সালে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন হামিন আহমেদ। আর কখনো ফেরা হয়নি ক্রিকেটে। এরপর থেকে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যন্ড দল মাইলসকে আকড়ে ধরেই আছেন তিনি। এভাবেই ক্রিকেটার হামিন হয়ে যান কিংবদন্তি মিউজিশিয়ান।
আসিফ আকবর
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর৷ তার প্রথম অ্যালবামের “ও প্রিয়া তুমি কোথায়” গানটি শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রথম অ্যালবাম দিয়ে বাজিমাত করা আসিফ দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অনেক সুপার হিট গান। আসিফের জন্ম এবং বেড়ে উঠা কুমিল্লায়। একসময় দুর্দান্ত ক্রিকেটার ছিলেন আসিফ৷ জেলা পর্যায়ে কুমিল্লা দলের অধিনায়কত্বও করেছেন আসিফ। তিনি ঢাকার প্রথম বিভাগ ক্রিকেটেও অংশগ্রহণ করেছেন৷ আসিফ বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব না করলেও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন আসিফ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১০-১১ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আসিফ৷ ক্রিকেটের পাশাপাশি গানের প্রতিও খুব আগ্রহ ছিল আসিফের৷ ক্রিকেট সিরিয়াসলি নেওয়ার আগেই গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করায় পেশা হিসেবে সংগীতকেই বেছে নিয়েছিলেন আসিফ। একাধিক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেছিলেন সংগীত শিল্পী না হলে তিনি অবধারিত ভাবেই ক্রিকেটার হতেন এবং তিনি যদি আলাদীনের চেরাগ পেতেন তাহলে দৈত্যকে বলতেন আবার যেন তাকে ক্রিকেটার জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়!
আরেফিন রুমি
২০০৮ সালে একক অ্যালবাম দিয়ে শুরু হয় আরেফিন রুমির ক্যারিয়ার। তারপর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে৷ ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা রাজত্ব করে গেছেন বাংলা গানের জগতে। এরপর কিছুটা অনিয়মিত হলেও এখন আবার নিয়মিত গান নিয়েই আছেন কিন্ত আরেফিন রুমিও হতে পারতেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার৷ গান যেমন পছন্দের বিষয় তেমনি ক্রিকেট খেলাও বেশ পছন্দ ছিল আরেফিন রুমির। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট নিয়েই ব্যাস্ত ছিলেন সময়ের এই জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান। খেলেছেন বিভিন্ন ক্রিকেট ক্লাবে৷ চট্রগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে দাপটের সাথে খেলেছেন। ঢাকার প্রথম বিভাগ ক্রিকেটেও ছিল তার বিচরন। কাঠাল বাগান ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ মাতিয়েছিলেন। আরেফিন রুমি মুলত ওপেনার ব্যাটসম্যান ছিলেন পাশাপাশি লেগ স্পিটাও ভাল করতেন৷ তার ক্রিকেট গুরু ওয়াহিদুল হক গনি তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদি ছিলেন৷ ক্রিকেটের পাশাপাশি গানের প্রতিও ভালবাসা ছিল রুমির। তার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল ছেলে গান করবে। ক্রিকেট প্র্যাক্টিসের সময় গিটার নিয়ে যেতেন। প্র্যাক্টিস শেষে সবাইকে গান করে শুনাতেন। এভাবেই শুরু হয় গানের জীবন আর দুরে সরে আসেন ক্রিকেট থেকে।
এসডি রুবেল
কণ্ঠশিল্পী এসডি রুবেল একসময় গানের অ্যালবাম বের করলেই শ্রোতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তো ক্যাসেটের দোকানগুলোতে। জনপ্রিয় এই কন্ঠ শিল্পি অভিনয় করেছেন বাংলা সিনেমাতেও। মিডিয়া জগতের এই স্টার ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হওয়ার, ক্রিকেটার হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। এসডি রুবেলের ছোটবেলার বেশিরভাগ সময় কাটতো ব্যাট-বল হাতেই। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট ভক্ত ছিলেন সংগীতশিল্পী এসডি রুবেল। তবে স্বীকৃত পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সৌভাগ্য হয়নি তার। খেলেছেন চাঁদপুরের স্থানীয় ক্রিকেট লীগে। সেখানে খুব পরিচিতি ছিল তার। চাঁদপুরের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন একবার। স্থানীয় ক্রিকেটে অল-রাউন্ডার হিসেবে সুনাম ছিল এসডি রুবেলের। ক্রিকেটের পাশাপাশি গানের প্রতিও তীব্র আগ্রহ ছিল রুবেলের এবং একটা পর্যায়ে এসে গানের জগতেই তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। ক্রিকেটে আর ফেরা হয়নি তার।