আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৫/০২/২০২৫ ০১:৪৫পি এম
কিডনি সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন যা করবেন?
প্রাথমিক পর্যালোচনা: কেন কিডনি সুস্থ রাখা জরুরি?
আমাদের শরীরে কিডনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সঠিকভাবে কাজ না করলে কিডনি রোগ তৈরি হতে পারে, যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। বর্তমানে, কিডনি রোগের পরিমাণ বিশ্বজুড়ে দ্রুত বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানাচ্ছে, কিডনি রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বছরে প্রায় ২.৪ মিলিয়ন।
কিডনি রোগের জন্য দায়ী প্রধান কারণসমূহ:
এখন, প্রশ্ন হলো—কিডনি রোগ কীভাবে হয়? চিকিৎসকদের মতে, কিডনি রোগের জন্য বেশ কিছু প্রধান কারণ রয়েছে। এগুলি হচ্ছে:
ডায়াবেটিস – রক্তে অতিরিক্ত শর্করা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) – দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া – বেশি লবণ কিডনি ও রক্তচাপে প্রভাব ফেলতে পারে।
কিডনি স্টোন – কিডনিতে পাথর জমে কিডনির কার্যক্ষমতা কমায়।
এছাড়া, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, এবং অস্বাস্থ্যকর ডায়েটও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনি সুস্থ রাখার ৭টি কার্যকর উপায়
এখন আসি, কিডনি সুস্থ রাখতে কী কী কাজ করা যেতে পারে, তা নিয়ে। এই সাধারণ তবে কার্যকর উপায়গুলি প্রতিদিন অনুসরণ করলে কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে:
পর্যাপ্ত পানি পান করুন কিডনির অন্যতম কাজ হলো শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করা। কিন্তু, শরীরে পানি কম থাকলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করুন কিডনির জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। শাকসবজি, ফলমূল, কম চর্বি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার কিডনির সুরক্ষা দেয়। এছাড়া, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। নিয়মিত প্রোটিন, বিশেষ করে মাছ ও ডাল খাওয়া কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন শরীরের মোট স্বাস্থ্যের মতো কিডনি সুস্থ রাখার জন্যও ব্যায়াম জরুরি। দৈনিক ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা কিডনি সুস্থ রাখতে কার্যকরী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন ধূমপান এবং মদ্যপান কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি ৫০% বেশি থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের একটি প্রধান কারণ। তাই প্রতিদিন রক্তচাপ মাপা উচিত। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মেডিকেল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন ডায়াবেটিস কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। নিয়মিত শর্করা মাপা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কিডনি সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনি পরীক্ষা করান কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণত স্পষ্ট হয় না। তাই, ৪০ বছরের পর নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। এটি কিডনির অক্ষমতা শুরু হওয়ার আগেই শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: কিডনি সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয়তা
ডাঃ হাসান আলী, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ, বলেছেন: “কিডনি রোগ খুব ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় এবং বেশিরভাগ সময় লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই, প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি পরীক্ষা ও সুস্থ জীবনযাপন খুব জরুরি। প্রতিদিন কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করলে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব।”
এছাড়া, ডাঃ সুমি রহমান, একজন মেডিকেল বিশেষজ্ঞ, যোগ করেছেন: “বর্তমান সময়ে কিডনি রোগের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এসব নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পরামর্শ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।”
পরিসংখ্যান: কিডনি রোগের প্রভাব
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কিডনি রোগের কারণে ২০১৭ সালে পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২.৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে কিডনি রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে, এবং এটি সারা বিশ্বের জন্য একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশেও কিডনি রোগের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। সুতরাং, এটি একটি গুরুতর সমস্যা, যার সমাধান হতে পারে সচেতনতা এবং সঠিক যত্নে।
মাঝারি-আয়ু মানুষের জন্য কিডনি রক্ষার অভ্যাস
মাঝারি বয়সী বা ৪০ বছরের উপরের মানুষদের জন্য কিডনি সুস্থ রাখার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। কিডনি সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ অত্যন্ত জরুরি।
কেস স্টাডি: সাফল্যের গল্প
মো. ফারুক হোসেন, ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, তার রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে কিডনি সুস্থ রাখতে সফল হয়েছেন। ফারুক বলেন, “আমি প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাই, নিয়মিত ব্যায়াম করি এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করি। গত বছর কিডনি পরীক্ষায় সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। আমার জন্য এটি একটি বড় সাফল্য।”
কিডনি সুস্থ রাখার গুরুত্ব ও ভবিষ্যত
কিডনি সুস্থ রাখা আমাদের শারীরিক সুস্থতার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে, বরং জীবনযাত্রার মানও উন্নত করে। আমাদের উচিত, প্রতিদিন কিছু সহজ অভ্যাস অনুসরণ করে কিডনিকে সুস্থ রাখা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চললে, কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
যেহেতু কিডনি রোগের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে, তাই সময়মতো সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা এর মোকাবিলা করতে পারি। আগামীতে, এই বিষয়ে আরও গবেষণা এবং আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিডনি রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।