বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৫/০২/২০২৫ ০১:১৭পি এম

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ: প্রাথমিক পর্যায়েই সচেতন হোন

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ: প্রাথমিক পর্যায়েই সচেতন হোন
ভূমিকা: কেন ডায়াবেটিসের লক্ষণ জানা গুরুত্বপূর্ণ?

ডায়াবেটিস বর্তমানে একটি বিশ্বব্যাপী মহামারীতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪২২ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এবং প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ এই রোগের জটিলতায় প্রাণ হারান। ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা এবং সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ রোগ যদি প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যায়, তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস কী?

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেখানে শরীরে ইনসুলিন হরমোনের অভাব বা কার্যকারিতা হ্রাস পায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়:

টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এটি সাধারণত ছোটবেলায় বা কৈশোরে দেখা যায় এবং শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয় বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়।

ডায়াবেটিসের প্রধান প্রাথমিক লক্ষণসমূহ

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যা অবহেলা করা উচিত নয়।

১. অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করা

ডায়াবেটিস হলে শরীর প্রচুর পরিমাণে পানি হারায়, ফলে ব্যক্তির বারবার তৃষ্ণা পেতে থাকে।

২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

ডায়াবেটিসের ফলে কিডনি অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে থাকে। এটি রাতে বেশি অনুভূত হয়।

৩. অস্বাভাবিক ক্ষুধা বৃদ্ধি

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, ফলে মানুষ বারবার ক্ষুধা অনুভব করে।

৪. ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি

বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া টাইপ ১ ডায়াবেটিসের একটি প্রধান লক্ষণ, অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে অনেক সময় ওজন বেড়ে যেতে পারে।

৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা

ডায়াবেটিস হলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, ফলে শরীরে শক্তির অভাব ঘটে এবং ব্যক্তি সবসময় ক্লান্ত বোধ করেন।

৬. ক্ষত বা কাটাছেঁড়া সহজে না শুকানো

ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যার ফলে ক্ষত বা কাটা-ছেঁড়া শুকাতে সময় লাগে।

৭. দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে চোখের রক্তনালীগুলোর উপর প্রভাব পড়ে এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।

৮. হাত-পা ঝিনঝিন করা

ডায়াবেটিস নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে হাত ও পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ অনুভূতি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো যদি উপেক্ষা করা হয়, তবে এটি পরবর্তীতে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ডায়াবেটোলজিস্ট ডাঃ আহমেদ বলেন, "অনেক রোগী যখন ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে আসেন, তখন তা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা থাকলে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করালে এই রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।"

পরিসংখ্যান ও গবেষণা

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ১৩% মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা জানতেই পারেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনধারার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি এই রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা, শাকসবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্থূলতা ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বছরে অন্তত একবার রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা উচিত।

উপসংহার

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা এবং সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়েই সতর্ক হলে এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমাদের সকলের উচিত স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ