ইলিয়াস কাঞ্চনের জয়ের পরও নিপুণের আসনে বসার পেছনের রাজনীতি
২০২২ সালের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। ওই নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রাথমিক ভোট গণনায় জায়েদ খান জয়ী হন। তবে, সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী নিপুণ আক্তার ফলাফল মেনে নেননি এবং আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেন এই চিত্রনায়িকা। বলা যায়, তিনি জোর খাটিয়ে এই পদটি বাগিয়ে নেন।
সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে যে, নিপুণের এই দাপটের পেছনে এক রাজনৈতিক নেতার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে তাকে জয়ী করতে নির্বাচন কমিশনারদের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখানো হয়। এমনকি নিপুণকে জয়ী করতে শেখ সেলিম নামের এক প্রভাবশালী নেতা ১৭ বার ফোনও করেন।
নির্বাচন কমিশনারদের একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তাদের জীবনের হুমকি ছিল এবং যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। তার কথায়, “আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো লোক।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার পিরজাদা হারুন জানান, ২০২২ সালের নির্বাচনে তার ওপর প্রচুর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা তাকে মানসিকভাবে এখনো আতঙ্কিত করে। তিনি বলেন, “নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন। তিনি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন।”
হারুন আরও উল্লেখ করেন, শুধু হুমকিই নয়, বড় অঙ্কের অর্থের লোভও দেখানো হয়। যখন তিনি রাজি হননি, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হয় এবং তাকে নানা ভাবে হয়রানি করা হয়।
সে বছর ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে পরাজিত হন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করেন, কিন্তু আপিল কমিটিও একই ফলাফল ঘোষণা করে। পরে নিপুণ আদালতের দ্বারস্থ হন এবং আদালতের রায়ের পর শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নিপুণের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ ঘটে এবং শেখ সেলিমের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। ২০১২ সালে তিনি বনানীতে নিজস্ব পারলার প্রতিষ্ঠা করেন, যার উদ্বোধনে শেখ সেলিম নিজেই আসেন।
চলচ্চিত্রপাড়ায় কম-বেশি সবাই জানতেন নিপুণের সঙ্গে শেখ সেলিমের সরাসরি যোগাযোগের কথা। তাদের মধ্যে ‘অন্যরকম’ একটি সম্পর্ক আছে বলেও গুঞ্জন ছিল। বিভিন্ন সময় নিজের অন্যায় আবদার পূরণের জন্য এই নেতার প্রভাব খাটিয়ে নিপুণ নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করেছেন।