আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ৩১/০১/২০২৫ ০২:৪২পি এম
অধ্যাপক ইউনূসের মুখে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পেছনের গল্প
সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, প্যারিসের একটি হাসপাতালে তার ছোট অস্ত্রোপচার শেষে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। সেই সময়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যে আলোচনা হয়েছিল, তা নিয়ে তিনি এবার খোলামেলা কথা বলেছেন।
প্যারিসের হাসপাতালে ফোন কল ও প্রথম প্রতিক্রিয়া
অধ্যাপক ইউনূস জানান, যখন তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে ছিলেন, তখন ছাত্রনেতারা তাকে ফোন করে বাংলাদেশে সংকটের কথা জানান এবং সরকার গঠন করতে অনুরোধ করেন। “আমি তখন প্যারিসে ছিলাম এবং হাসপাতালে ছোট একটা অস্ত্রোপচার করাচ্ছিলাম। তারা আমাকে ফোন দিয়ে বলল, ‘শেখ হাসিনা চলে গেছেন, এখন আমাদের সরকারের জন্য একজন নেতা দরকার। আপনি দয়া করে আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’ আমি তাদের বললাম, ‘না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি কিছু জানি না এবং এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না।’”
ছাত্রনেতাদের অনুরোধ ও তাদের চেষ্টা
প্রথমে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে কোনো পরিস্থিতি জানতে না চাইলেও, ছাত্রনেতারা বারবার চেষ্টা করছিলেন। তারা তার কাছে আরও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছিল। “তারা আমাকে বলল, ‘আপনি একমাত্র যিনি আমাদের সাহায্য করতে পারেন।’ আমি তাদের বলেছিলাম, ‘বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন, আপনি তাদের কাছে যান।’ কিন্তু তারা বলল, ‘না, আমরা কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না, আপনিই আমাদের একমাত্র ভরসা।’ এরপর আমি বললাম, ‘অবশ্যই, তোমরা চেষ্টা করো, যদি না পেয়ে যাও, তবে আমাকে আবার ফোন করো।’”
দেশের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার মুহূর্ত
অবশেষে, ছাত্রনেতারা অধ্যাপক ইউনূসকে আবার ফোন করে জানান, তাদের যথেষ্ট সময় নেই এবং তাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। “তারা বলল, ‘আমরা প্রচুর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কাউকেও খুঁজে পাইনি। আপনিই একমাত্র যিনি আমাদের জন্য কিছু করতে পারবেন।’ শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, ‘যেহেতু তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছ, প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে এবং তোমরা সম্মুখসারিতে আছো, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য কিছু করতে আমারও উচিত। আর এটাই সেই সময়, আমি রাজি।’”
ফুলের তোড়া ও ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে পরিচিতি
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, অধ্যাপক ইউনূস প্যারিসের হাসপাতালের একজন নার্সের কাছে ফুলের তোড়া পান। নার্স তাকে জানিয়ে বলেন, “আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, এটা আমরা জানতাম না।” অধ্যাপক ইউনূস বিস্মিত হয়ে বলেন, “এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন?” নার্স বলেছিলেন, “সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’।”
এরপর, হাসপাতালের প্রধান এবং বোর্ড সদস্যরা অধ্যাপক ইউনূসকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং তার জন্য নিরাপদ যাত্রার ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত থাকে।
প্রস্তুতির চূড়ান্ত মুহূর্ত
অধ্যাপক ইউনূসের কথায়, “বিকেল হওয়ার আগেই আমাকে হাসপাতাল ছাড়তে হবে এমন জানিয়ে, হাসপাতাল পরিচালক আমাকে প্রস্তুতির জন্য সব ব্যবস্থা নিতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি একজন প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপদ যাত্রার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নেবো। আপনি আমাদের কাছে নিরাপদেই ফিরে যাবেন।’”
অধ্যাপক ইউনূসের এই অভিজ্ঞতা এবং তার চিন্তা-ভাবনা থেকে পরিষ্কার যে, সে সময়ের সংকটের মধ্যে দেশকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিচালনার পথ দেখাতে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।