বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৯/০১/২০২৫ ১২:০৪পি এম

দাবির শহর ঢাকা: প্রতিদিন নতুন নতুন আন্দোলনে উত্তাল জনপদ

দাবির শহর ঢাকা: প্রতিদিন নতুন নতুন আন্দোলনে উত্তাল জনপদ
সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই আন্দোলনের ঢেউ থামার নাম নিচ্ছে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একের পর এক দাবি আদায়ে রাস্তায় নামছেন। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, রিকশা থেকে রেল—সর্বত্র দাবির মিছিল আর বিক্ষোভ। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আন্দোলনকারীরা যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেছেন, কারণ দাবি জানালেই তা পূরণ হওয়ার নজির দেখা যাচ্ছে।

তবে এসব দাবির মধ্যে কিছু যৌক্তিক হলেও বেশিরভাগই অযৌক্তিক ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেন, "বৈষম্য নিরসনের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলন স্বাভাবিক। গত ১৬ বছর ধরে যারা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারা এখন নিজেদের ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নামবেন, এটা স্বাভাবিক। তবে আন্দোলনের জন্য রাস্তা নয়, খোলা ময়দান নির্দিষ্ট করা উচিত, যাতে জনদুর্ভোগ এড়ানো যায়।"

বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নেমেছে মানুষ

৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই একের পর এক আন্দোলন শুরু হয়। রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সংঘর্ষ বাঁধে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একই সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরাও নিজেদের দাবিতে রাস্তায় নামে।

অগাস্টের শেষের দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণ, স্থায়ীকরণ, পুনর্বহাল, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারসহ নানা দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। বাংলাদেশ আনসার, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার, শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি-কাম-প্রহরীরা এই আন্দোলনে অংশ নেয়।

২৫ আগস্ট চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আনসার বাহিনী সচিবালয় অবরোধ করে। প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্য একত্রিত হয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করে, যেখানে সরকারের সাতজন উপদেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখা হয়। দাবিগুলো মেনে নেওয়ার পরও উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সেনাবাহিনীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

শ্রমিকদের আন্দোলন: ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা

সেপ্টেম্বরে সাভার-আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। সরকার পতনের পর নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় তাদের বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। ২৬ জানুয়ারি রাতে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি বন্ধ কারখানা চালু করার দাবিতে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। তাদের প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা, এলসি খোলা ও বকেয়া পরিশোধ করা। অন্যদিকে, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দুই দফা দাবিতে কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

জনদুর্ভোগের সমাধান কী?

অবিরাম আন্দোলন ও বিক্ষোভের ফলে রাজধানী ঢাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসতে হবে এবং যৌক্তিক দাবি পূরণ করতে হবে। অন্যদিকে, অযৌক্তিক ও বিশৃঙ্খল আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

দেশজুড়ে দাবির আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন সবার নজর কাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ