আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৬/০১/২০২৫ ০৯:২৭এ এম
১১ কক্ষের ভরসায় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ: ভবিষ্যৎ কি অনিশ্চিত?
চাঁদপুর সরকারি মেডিকেল কলেজ তার প্রতিষ্ঠার সাত বছর পরেও নিজস্ব ভবন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই মেডিকেল কলেজটির কার্যক্রম বর্তমানে ১১টি কক্ষে সীমাবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন, পাঠদানের জন্য নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং হাতে-কলমে শেখার জন্য নেই আধুনিক ল্যাবরেটরি। এমনকি পড়াশোনার জন্য একটি মানসম্মত লাইব্রেরিও এখনো স্থাপন করা হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম:
বর্তমানে এই কলেজে ২৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এ বছর আরও ৭৫ জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে যাচ্ছেন। তবে সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এদিকে, প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নশিপ শুরু করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে তারা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছেন না। অসম্পূর্ণ জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে একদল চিকিৎসক দেশের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত হতে যাচ্ছেন, যা পুরো ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।
দেশব্যাপী চিত্র:
বাংলাদেশে বর্তমানে ১১০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি, বেসরকারি ৬৭টি, আর্মি মেডিকেল কলেজ ৫টি এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ ১টি। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ৬টির এখনো নিজস্ব ভবন বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছে নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ, নওগাঁ মেডিকেল কলেজ, নীলফামারী মেডিকেল কলেজ, মাগুরা মেডিকেল কলেজ এবং সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ। উল্লেখযোগ্য যে, সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও অন্যান্যগুলো ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
নীতিমালার অভাব:
সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমি, ভবন, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, শিক্ষকের সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়। কিন্তু সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত পূরণের প্রয়োজন হয় না। বরং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করেই এসব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু মেডিকেল কলেজ চলার মতো নয়। আমার ধারণা, ৫০ শতাংশ সরকারি মেডিকেল কলেজ ঠিকমতো চলছে না। সব কটিকে চালু রাখার মানে হয় না। কিছু একটা করতেই হবে। কী করা যায়, তা নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করছে।’
উপসংহার:
যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকল্পনার অভাবে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অবস্থা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে দেশের স্বাস্থ্যখাত আরও সংকটের মুখে পড়তে পারে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।