আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৩/০১/২০২৫ ০৪:০৬পি এম
অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্রদের অংশগ্রহণ: রাজনৈতিক অঙ্গনে মির্জা ফখরুলের কঠোর বার্তা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে ছাত্ররা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তবে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এটি মেনে নেবে না। তিনি বলেন, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন কোনো অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ হবে তাদের নিরপেক্ষতার ওপর। তিনি বলেন, “যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, তাহলেই তারা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে পারে। তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।”
নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদের অবস্থান ও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি
বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানালেও ছাত্রনেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়নি। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনা। গণতন্ত্রের প্রথম ধাপই হলো নির্বাচন। তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকার পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। জনগণ তাদের ভোট দিতে পারেনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ভোট দেওয়ার অধিকারই একজন নাগরিক হিসেবে আমার প্রথম অধিকার। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আমরা গণতান্ত্রিক পথে এগোতে পারব না। তাই আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ফিরতে চাই।”
দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে যুক্তি
মির্জা ফখরুল জানান, “আমরা আগেই বলেছি যে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। সরকার যদি চায়, জুন-জুলাই বা আগস্টের মধ্যেই এটি সম্ভব।” তিনি উল্লেখ করেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা নির্বাচিত সরকারের অনুমোদন ছাড়া পুরোপুরি সম্ভব নয়। এজন্যই দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজন।”
সংবিধান সংস্কার ও অন্যান্য উদ্যোগ
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনার জন্য সংসদের প্রয়োজন। আমরা ইতোমধ্যে ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধান সংস্কার, জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার, প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্গঠন এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা। এগুলো বাস্তবায়ন করতে নির্বাচিত সংসদ অপরিহার্য।”
স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার আশঙ্কা নাকচ
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও মির্জা ফখরুল এটি পুরোপুরি নাকচ করেন। তিনি বলেন, “আমরা কখনোই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না। বহুদলীয় গণতন্ত্র আমরা এনেছি। একদলীয় শাসন থেকে মুক্তি এনে মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করেছেন জিয়াউর রহমান।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধান সংস্কার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ বিএনপিই নিয়েছে। তাই আমাদের স্বৈরাচারী বলে আঙুল তোলার কোনো সুযোগ নেই।”
শেষ কথা
মির্জা ফখরুলের মন্তব্যে স্পষ্ট যে, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। তারা বিশ্বাস করে যে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বক্তব্য নতুন আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের প্রতি কী প্রতিক্রিয়া জানায়।