বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৩/০১/২০২৫ ১২:৩৪পি এম

আজ দেড় শতাধিক বিডিআর সদস্যের মুক্তি: কাশিমপুর ও কেরানীগঞ্জ কারাগারে প্রক্রিয়া চলমান

আজ দেড় শতাধিক বিডিআর সদস্যের মুক্তি: কাশিমপুর ও কেরানীগঞ্জ কারাগারে প্রক্রিয়া চলমান
বিস্ফোরক আইনের মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন প্রায় দেড় শতাধিক বিডিআর সদস্য। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এ মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন সকালে জানিয়েছেন, এই কারাগার থেকেই মোট ৮৯ জন সদস্যকে মুক্তি দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘মুক্তির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। সবকিছু সম্পন্ন হতে বেলা ১২টা নাগাদ সময় লাগতে পারে।’

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা বাবার মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কারাগারের বাইরে অবস্থানরত পরিবারের সদস্যরা। তাদের মধ্যে একজন মো. শাকিল আহমেদ, যিনি তাঁর বাবার মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন বছরের পর বছর। তিনি জানান, ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই মুক্তি এসেছে।’

শাকিল আহমেদ আরও বলেন, ‘আমার বাবাসহ এই মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ১৬ বছর ধরে কারাগারে বন্দি থাকা মানুষদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি অবিলম্বে এই মামলাটি প্রত্যাহারের দাবিও জানান।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান

কারাগারের বাইরের পরিবেশ আজ বেশ আবেগঘন। পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপ্রাপ্তদের স্বাগত জানাতে ভিড় জমিয়েছেন। তাদের চোখে-মুখে একদিকে যেমন স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আনন্দ, অন্যদিকে দীর্ঘদিনের কষ্টের স্মৃতি।

কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, মুক্তির কার্যক্রম অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন, সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে মুক্তিপ্রাপ্তদের হস্তান্তর করা হবে।

মামলা প্রত্যাহারের দাবি জোরদার

এই মুক্তির পরেও মামলার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়ে গেছে। অনেকে মনে করছেন, ১৬ বছর ধরে যেসব বিডিআর সদস্য কারাবন্দি ছিলেন, তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়নি। বেশ কয়েকজন মুক্তিপ্রাপ্ত সদস্যের পরিবার আদালতের কাছে এই মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ বন্দিজীবনের কারণে মানসিক এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অতীতের স্মৃতি এবং বর্তমান বাস্তবতা

বিডিআর বিদ্রোহের পটভূমিতে এই মামলার শুরু হয়েছিল। যদিও এ বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ এবং দায়-দায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক এখনও চলছে। মুক্তিপ্রাপ্তদের একজন জানান, ‘আমরা দোষী নই। আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।’

এই মুক্তির ঘটনা বিডিআর বিদ্রোহ এবং তার পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি মানবিক এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক আচরণ নিশ্চিত করা জরুরি।

শেষ কথা

আজকের এই মুক্তি দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটালেও পুরো ঘটনার ন্যায্য সমাধান এখনও একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত সদস্যরা তাদের পরিবারে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকলেও, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি নতুন করে জোরদার হচ্ছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বিডিআর বিদ্রোহ একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। তবে এই মুক্তির মাধ্যমে নতুনভাবে আশার আলো দেখা দিয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ