আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৩/০১/২০২৫ ১২:১৩পি এম
বিষের বিপদে সুন্দরবন: রক্ষক বন এখন নিজেই বিপন্ন!
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরবন আজ নানা সংকটে জর্জরিত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, এবং উষ্ণতার সাথে লড়াই করেও দেশের এই অতন্দ্র প্রহরী এখন মানুষের অমানবিক আচরণের শিকার। বনজীবন ধ্বংসের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিষ দিয়ে মাছ ধরা।
বিষে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতা: কারা জড়িত?
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সুন্দরবনের নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরার পিছনে কাজ করছে প্রভাবশালী তিনটি গোষ্ঠী।
কোম্পানি মহাজন:
বন উপকূলের একশ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী, যাঁরা স্থানীয় জেলেদের প্ররোচিত করছেন বিষ ছিটিয়ে মাছ ধরতে।
অসাধু বনরক্ষী:
কোম্পানি মহাজনদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বনরক্ষীরা এই অবৈধ কার্যক্রমকে ছাড়পত্র দিচ্ছেন।
বনদস্যু ও মিথ্যা সাংবাদিকতা:
বনদস্যুরা সরাসরি এই চক্রে জড়িত এবং তাদের সহযোগিতা করছেন কিছু অসাধু সাংবাদিক, যাঁরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে বনজীবন ধ্বংসের পথ সুগম করছেন।
বিষের ব্যবহার: মাছ ও প্রকৃতির ক্ষতি
বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোর মতে, জেলেরা দুটি ভিন্ন ধরনের বিষ ব্যবহার করেন—একটি সাদা মাছের জন্য, অন্যটি চিংড়ির জন্য। এসব বিষ সাধারণত কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়, যা নদীর পানি ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
সাংবাদিকতার আড়ালে বনজীবন ধ্বংস
খুলনা অঞ্চলের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ওসি সাবিত মাহমুদ জানিয়েছেন, কয়েকজন সাংবাদিক বনজীবনের ক্ষতির জন্য দায়ী। এমনকি কয়রা উপজেলার একজন সাংবাদিক সুন্দরবনে পারশে পোনার অবৈধ ব্যবসা করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অনেক সাংবাদিক প্রতি মাসে ফরেস্ট স্টেশন থেকে মাসোহারা নিয়ে বনরক্ষীদের অবৈধ কাজের আড়াল করে চলেছেন।
সমাধানের দাবি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এসব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
কঠোর নজরদারি: বন রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ এবং সৎ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।
সাংবাদিকতার সততা: মিথ্যা পরিচয়ে মাসোহারা গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বনের জীবন রক্ষায় কঠোর আইন: বিষ দিয়ে মাছ ধরা এবং বনদস্যুদের তৎপরতা বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান কার্যকর করা জরুরি।
চূড়ান্ত প্রশ্ন
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র পৃথিবীর পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। আমরা কি পারব এই রক্ষক বনকে রক্ষা করতে? নাকি মানুষের লোভের কাছে হার মানবে প্রকৃতি?
সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ আমাদের হাতেই। এখনই ব্যবস্থা নিন!