বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২২/০১/২০২৫ ১২:১২পি এম

চাঁদাবাজি ও ঘুস প্রতিরোধে 'গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড' গঠনের সুপারিশ: নতুন আলোচনায় সরকার

চাঁদাবাজি ও ঘুস প্রতিরোধে 'গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড' গঠনের সুপারিশ: নতুন আলোচনায় সরকার
গাজীপুরের একজন মাঝারি মানের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর অশ্রুসিক্ত আর্তি, "শ্রমিকদের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনোমতে কারখানা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু চাঁদাবাজদের হাত থেকে আমাকে বাঁচান!"—এই করুণ দৃশ্য সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক টাস্কফোর্সের সভায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এ সভায়, যেখানে বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, উঠে আসে চাঁদাবাজি ও ঘুসের কারণে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতার চিত্র। টাস্কফোর্স খসড়া প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ গঠনের, যা শুধুমাত্র চাঁদাবাজি ও ঘুস প্রতিরোধে কাজ করবে।

চাঁদাবাজির অর্থনীতি এবং ব্যবসার ক্ষতি
টাস্কফোর্সের তথ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজি ও ঘুস লেনদেন ব্যবসায় খরচ এবং পণ্যের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সেবা পেতে ঘুস দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে প্রভাবিত করছে।

খসড়া প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো:

‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ গঠন:

দক্ষ আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে প্রাথমিকভাবে এই স্কোয়াড গঠিত হবে।
প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ করে তোলা হবে।
নেতৃত্বে থাকবে পেশাদার এবং দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা।
চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কৌশল:

হাট-বাজার, ঘাট ও পরিবহন খাতে সরাসরি কার্যক্রম।
সরকারি সেবা (যেমন: পাসপোর্ট, রেল টিকিট) প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুস বন্ধ।
সুশীল সমাজ এবং শিক্ষার্থীদের তদারকির কাজে অন্তর্ভুক্ত করা।
টাস্কফোর্সের অন্যান্য প্রস্তাবনা
রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশন গঠন:
ব্যবসা, বিনিয়োগ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশন আইন-কানুন, নীতিমালা পর্যবেক্ষণ ও সংশোধন করবে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ:

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।
দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরিতে কারিগরি শিক্ষার প্রসার।
তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা উন্নত করা।
রপ্তানি বৈচিত্র্য:
উদীয়মান খাতগুলোতে নীতি সহায়তা এবং তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য রপ্তানি পণ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা।

টাস্কফোর্সের সভাপতির বক্তব্য
ড. কেএএস মুর্শিদ বলেছেন, "চাঁদাবাজি আমাদের সমাজে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রচলিত ব্যবস্থায় এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। তবে স্বাধীন ‘গুন্ডা প্রতিরোধ স্কোয়াড’ গঠনের মাধ্যমে আমরা এটি দমন করতে পারব। এটি স্বল্প খরচে পরিচালনা করা সম্ভব এবং সঠিক নেতৃত্ব থাকলে এটি সফল হবে।"

ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও ঘুসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমেও এই স্কোয়াড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই প্রতিবেদনকে ঘিরে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। সরকারের আন্তরিকতা এবং দ্রুত বাস্তবায়নই হবে প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি।

অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার এই প্রচেষ্টা কি শেষ পর্যন্ত সফল হবে? সেটি সময়ই বলে দেবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ