বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২১/০১/২০২৫ ১২:২১পি এম

লক্ষ্মীপুরে কৃষকদের সামনে দুর্দিন: ভয়াবহ বন্যার পর ফসলহীন জমিতে হতাশা, সবুজ ধান কেটে গরুর খাবার

লক্ষ্মীপুরে কৃষকদের সামনে দুর্দিন: ভয়াবহ বন্যার পর ফসলহীন জমিতে হতাশা, সবুজ ধান কেটে গরুর খাবার
লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার কৃষকরা এখন দুঃখ এবং হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর ফসলের ক্ষেতগুলো অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। যেসব ধানের বীজ তারা কৃষি কাজে ব্যবহার করেছিলেন, তা এখন আর ফলছে না। ফলস্বরূপ, কৃষকরা একে একে তাদের ধানের গাছগুলো কেটে ফেলছেন এবং কাঁচা ধান গরুর ঘাস হিসেবে ব্যবহার করছেন। এই পরিস্থিতি শুধু কমলনগরেই নয়, জেলার অন্যান্য অংশেও ভীষণভাবে প্রকট। চলুন, বিস্তারিত জানি এই দুর্দিনের গল্পটি।

বন্যার পর কৃষকদের কঠিন সময়
গত বছর আগস্টে ভয়াবহ বন্যার কারণে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার কৃষকরা যে তীব্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার প্রতিফলন এখন স্পষ্ট। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রায় ৫ থেকে ৬ বার বীজ রোপণ করেছেন, কিন্তু ফলন হয়নি। প্রথমে তারা নিজেদের বীজ ব্যবহার করেছিল, তারপর বাজার থেকে কেনা বীজ, এমনকি সরকারি প্রণোদনার বীজও ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কোনো ফলনই তারা পায়নি। প্রায় সকল ক্ষেতেই কেবল কাঁচা ধান দাঁড়িয়ে আছে, তবে ধানের শীষ বের হচ্ছে না।

জমির দুঃসহ অবস্থা
এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা এখন তাদের জমিতে কাঁচা ধান কেটে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন। কমলনগরের তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার মিয়া জানান, বন্যার পর তিনি পাঁচবার বীজ রোপণ করেছেন, কিন্তু ফসলের কোনো ফলন হয়নি। "সবুজ ধান গাছ কেটে ফেলছি, কারণ আর কোনো উপায় নেই," তিনি বললেন। আনোয়ারের ৪০ শতক জমির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকার। "কোনো কাজ নেই, শুধু চিন্তা করে যাচ্ছি," তিনি আরও বলেন।

কৃষকদের মধ্যে হতাশা
কমলনগরের চর কাদিরা গ্রামের কৃষক মতিউর এবং কামাল তাদের জমিতে পাঁচবার বীজ লাগিয়েছেন, কিন্তু ফলন হয়নি। তারা এখন সবুজ ধান গরুর ঘাস হিসেবে বিক্রি করছেন। মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সমস্ত জমিতেই কাঁচা ধান গাছ দাঁড়িয়ে আছে, তবে কোনো ফলন নেই। এমন করুণ দৃশ্য দেখে কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

ক্ষতির পরিণতি
এদিকে, কৃষকদের এই অবস্থা সুনির্দিষ্টভাবে পর্যালোচনা করে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার প্রায় ৯০% মানুষ কৃষি কাজে নিয়োজিত। এই এলাকার মানুষগুলোর জন্য চাষাবাদই একমাত্র আয়ের উৎস। তবে এবারের বন্যার পর কৃষকরা নানান জায়গা থেকে বীজ সংগ্রহ করেছিলেন, কিন্তু এখন তারা ফের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন।

ধানের ফলনে সমস্যা কেন?
এবারের ধানের ফলন না হওয়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা একাধিক মতামত দিয়েছেন। কৃষক আবুল কালাম ও তুহিন জানান, গত বছর আগস্টে ভয়াবহ বন্যার কারণে তারা প্রথমে বীজ রোপণ করতে পারেননি। পরে, তারা বিভিন্ন বার বীজতলা তৈরি করেছিলেন, কিছু সফল হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেতেই কোনো ফলন আসেনি। তারা মনে করেন, বীজের গুণমান বা ধানের জাতের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকতে পারে।

কর্মকর্তাদের বক্তব্য
কৃষকদের দুর্দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে, কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহিন রানা বলেন, বন্যার পর কৃষকরা একাধিকবার বীজ লাগিয়েছেন। তবে ফলন ভালো হয়নি। তিনি জানান, আমন ধান মূলত আলোক সংবেদনশীল উদ্ভিদ। বিলম্বে লাগানোর কারণে ফলনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, প্রণোদনার ব্রিধান-৭৫ জাতের ধানে কৃষকরা ফলন পায়নি।

সরকারের ভূমিকা ও সমাধান
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষকরা এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন? সরকারের তরফ থেকে কোনো সমাধান আসবে কি? স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন যে, কৃষকদের পুনরায় সহায়তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজের পরিকল্পনা চলছে। তবে, এইসব প্রণোদনা কার্যকর হতে সময় নিবে, আর কৃষকরা এই দুর্দিনে যে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠা সহজ হবে না।

এভাবেই লক্ষ্মীপুরের কৃষকরা দুঃসময় পার করছেন। তাদের সামনে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন: কীভাবে তারা এই ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ