বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১২/০১/২০২৫ ০৪:১৩পি এম

বিডিআর বিদ্রোহ: পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে চমকে ওঠা বাংলাদেশ

বিডিআর বিদ্রোহ: পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে চমকে ওঠা বাংলাদেশ
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ: এটি শুধু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিদ্রোহ ছিল না, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ এবং গভীর ষড়যন্ত্রমূলক অধ্যায়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে প্রাণ হারান। ঘটনাটি একটি সামরিক বিদ্রোহের আড়ালে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার সঙ্গে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র।

অভিযোগের তীর শেখ হাসিনা ও সহযোগীদের দিকে
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ ঘটনায় শেখ হাসিনা, তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও একটি প্রশিক্ষিত কিলার গ্রুপকে ব্যবহার করে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এ ষড়যন্ত্রে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।

বিদ্রোহের পেছনের ভারতীয় সংযোগ
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্রোহের সময় ভারতীয় কিলার গ্রুপের সদস্যরা রোগী ও খেলোয়াড় সেজে পিলখানায় প্রবেশ করেছিল। তাদের পিলখানায় প্রবেশ ও বহির্গমনের জন্য নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্স এবং বিমান ফ্লাইট ব্যবহৃত হয়। এমনকি, তারা ফার্মগেটের হোটেল ইম্পেরিয়ালে অবস্থান করেছিল। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহযোগিতায় এসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ।

তদন্তে অসংগতি ও আলামত ধ্বংস
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরপরই গুরুত্বপূর্ণ আলামত, যেমন সিসিটিভি ফুটেজ, ধ্বংস করা হয়। তৎকালীন ডিজি লে. জেনারেল মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় এবং সেনা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের জড়িত থাকার তথ্য উঠে এলেও তদন্ত অসম্পূর্ণ রেখে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা সরাসরি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ করেন বলে অভিযোগ।

নিরীহ বিডিআর সদস্যদের দাবি
এ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের পরিবার দাবি করেছে, তারা প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চান। মিথ্যা মামলায় আটক বিডিআর সদস্যদের মুক্তি এবং বিদ্রোহের পেছনের মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন তারা।

বিদ্রোহ না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
অনেকের মতে, এটি ছিল বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দুর্বল করার একটি সুদূরপ্রসারী ভারতীয় পরিকল্পনা। বিদ্রোহের মাধ্যমে চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিকল্পনা শেখ হাসিনাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় ধরে রাখতে এবং বাংলাদেশের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছিল।

দেশবাসীর দাবি: সত্য উদঘাটন ও বিচার
বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষ, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের একটাই দাবি—এ ঘটনা নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং প্রকৃত দোষীদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।

শেষ কথা
বিডিআর হত্যাকাণ্ড কি শুধুই বিদ্রোহ ছিল, নাকি এটি ছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য একটি সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ? প্রশ্নটি আজও ঘুরপাক খাচ্ছে, এবং উত্তর পেতে জাতি অপেক্ষা করছে একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ