বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১১/০১/২০২৫ ১২:০২পি এম

বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা: সুবিধা, বিরোধিতা ও সংস্কারের দাবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা: সুবিধা, বিরোধিতা ও সংস্কারের দাবি
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত। এর মধ্যে পোষ্য কোটা বিশেষভাবে আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা, সীমা এবং সংস্কার নিয়ে বিতর্ক চলছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা: নিয়ম ও প্রতিবন্ধকতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বিদ্যমান, যার মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান, স্ত্রী এবং ভাই-বোনরা পরীক্ষায় পাস করলেই ভর্তি হতে পারেন। তবে এবার প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রতিটি বিভাগে সর্বোচ্চ চারজন পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে পারবেন। বর্তমানে ৩৭টি বিভাগে সর্বোচ্চ ১৪৮ জন পোষ্য ভর্তির সুযোগ পাবেন। বিগত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন ৫৩ এবং সর্বোচ্চ ৫৯ জন পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন, পোষ্য কোটার শর্ত এবং আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে হবে। শিক্ষার্থী আবদুর রশিদ বলেন, “পোষ্য কোটায় ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করা জরুরি। শুধুমাত্র পাস করলেই ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।”

দেশব্যাপী আন্দোলন ও সংস্কারের দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা রয়েছে। তবে, এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ তীব্র। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসেছেন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানববন্ধন করে পোষ্য কোটা বহালের পক্ষে সওয়াল করছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। একপর্যায়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, কেবল কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা থাকবে। তবে তা–ও আন্দোলনকারীরা মানেননি।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখা জরুরি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকা উচিত। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, “পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা ও সম্পর্কের ধরন সীমিত করা যেতে পারে। তবে একেবারে বাদ দেওয়া কঠিন হবে।”

মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা নির্দিষ্ট সময়সীমায় বজায় রাখা যেতে পারে, তবে নাতি-নাতনিদের ক্ষেত্রে এটি বাতিলের সময় এসেছে।

কোটা ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন, শিক্ষক এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। পোষ্য কোটার সংখ্যা সীমিত করে এবং যোগ্যতার মানদণ্ড ঠিক করে এর সংস্কার সম্ভব। পাশাপাশি, অন্যান্য কোটাগুলোর স্বচ্ছতা ও সমতা নিশ্চিত করার দিকেও নজর দেওয়া উচিত।

এমন একটি সময়, যখন উচ্চশিক্ষায় মেধার মূল্যায়ন চর্চা জোরদার করার আহ্বান উঠেছে, তখন পোষ্য কোটার যৌক্তিক সংস্কার জরুরি। কোটা ব্যবস্থা একদিকে মেধার স্বীকৃতিকে যেন অবহেলিত না করে, অন্যদিকে অনগ্রসর শ্রেণির সমানাধিকার নিশ্চিত করে, সেটিই এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ