দিনভর আগুন, সংঘর্ষ, গুলি, নিহত ১১২
আজ ৫ আগস্ট রবিবার অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে সকালে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন স্থাপনা ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাসভবনে আঙুন দিয়েছে, ভাঙচুর চালিয়েছে। কোথাও কোথাও থানা ঘেরাও করলে সংঘর্ষ হয়েছে, পুলিশ গুলি ছুড়েছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত ঢাকার উত্তরায় ১৫ জন, যাত্রাবাড়ীতে ৪ জন, ঢাকা মেডিকেল এলাকায় ২ জন, সাভারে ১৮ জন, ধামরাইয়ে ৩ জন, চাঁদপুরে ২ জন, নোয়াখালীতে ৫ জন, কুষ্টিয়ায় ৭ জন, হবিগঞ্জে ৬ জন, যশোরে ১৮ জন, পটুয়াখালীতে ১ জন, ঝিনাইদহে ৪ জন, গাজীপুরে ৯ জন, সাতক্ষীরায় ৫ জন, ফরিদপুরে ২ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন, টাঙ্গাইলে ৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৮ জনসহ মোট ১১২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষের সময় ঢাকার সাভারের পাকিজা এলাকায় আজ সোমবার শ্রাবণ গাজী (২১) নামের একজন নিহত হয়েছেন। শ্রাবণ গাজীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, আজকে সংঘর্ষের ঘটনার পর হাসপাতালটিতে ৫ জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ছাড়া দেড় শতাধিক গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন রমজান, মোজাহিদ, নাফিসা, তৌহিদুর রহমান, রাসেল, রফিক, নিসান ও শব্দ। তবে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ইউসুফ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে রাত ৮টা পর্যন্ত ২৫-৩০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৩ জনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজনের নাম জাহিদুল ইসলাম (২৫)। বাকিদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে শহরের চিত্রার মোড়ে অবস্থিত ১৪তলা ওই হোটেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যশোর ফায়ার সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক কেএম মামুন জানান, জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাত ১১টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে।
গাজীপুরের টঙ্গীতে ইসমাইল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার আউচপাড়া সুরতরঙ্গ রোডে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল আউচপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি স্থানীয় যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।
রাজধানীর উত্তরার ‘উত্তরা পূর্ব’ থানা ও পুলিশের গাড়িতে হামলা ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। চার ঘণ্টা ব্যাপী তাণ্ডবে উত্তরায় ১৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আজমপুরের অবস্থিত ওই থানায় আজ সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি, কাদকে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও অন্তত ১৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় কারাগারের সব আসামি পালিয়ে যান। এদিকে, সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনসহ চারজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সোনাইমুড়ীতে পুলিশের গুলিতে অন্তত তিনজন ব্যক্তি ও দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অর্ধশত মানুষ। আজ সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে নৌপুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম চঞ্চল (২১) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকালে এ ঘটনায় আন্দোলনকারীরা উত্তেজিত হয়ে শিবালয় থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানায় দুজন এবং বিকেলে ধনবাড়ী থানার সামনে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সময় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর বাউফলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মনিরুল ইসলাম শাহীন (৪২) নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছে। তিনি মদনপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের একজন কর্মী ছিলেন।
ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে কোতোয়ালি থানায় হামলার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম সামসু ড্রাইভার। বাড়ি শহরের পূর্ব খাবাসপুরের ঢাকাইপট্টিতে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তাঁর ছেলে চিত্রনায়ক শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সোমবার এলাকা ছেড়ে থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে তাঁরা জনরোষে পড়েন। সেখানে নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে উদ্ধার হয়ে আসতে পারলেও পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে এসে জনতার মুখোমুখি হন। সেখানেই জনতার পিটুনিতে নিহত হন সেলিম খান ও তাঁর ছেলে শান্ত খান।
কুষ্টিয়া শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলের দিকে থানাপাড়ায় ও মজমপুর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। আহতরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়ার সমন্বয়ক তুষার আহমেদ তুহিন ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম।
নিহতরা হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার বাবু (৩৫), একই এলাকার আশরাফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার লোকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৬), ইউসুফ (৫০), দহকুলা এলাকার ওসামা, বাকি দুজন অজ্ঞাত (আন্দোলনকারীরা তাদের উদ্ধার করেন)।
ঢাকার ধামরাইয়ে শরীফবাগ বাজারে সাজেদা আক্তার নামে এক গৃহবধূ গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় ধামরাই পৌর এলাকায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ সাজেদা আক্তার (৪০) শরীফবাগ এলাকার বাসচালক মো. শওকত আলীর স্ত্রী। নিহত বাকি দুজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
৫ ঘণ্টা ধরে উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে রেখেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ অবস্থায় থানা থেকে অনবরত ছুড়তে থাকা রাবার বুলেট ও গুলিতে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
ঘটনাস্থল থেকে আজ সোমবার রাত ৯টায় আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বিকেল ৪টা থেকে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘিরে রেখেছে। থানার ছাদ থেকে সিভিল ড্রেসে ২ জনকে রাবার বুলেট ও গুলি চালাতে দেখা গেছে অনবরত। তবে এক পর্যায়ে সেখান থেকে শুধু টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায়। এরমধ্যে অনেক মানুষ থানার ভেতর ঢুকে পড়ছেন। থানায় বিভিন্ন জিনিস লুটপাট চলেছে, দেয়াল ভাঙচুর চলেছে।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা ঘেরাও করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন। আহত হয়েছেন পুলিশসহ দেড় শতাধিক।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা মহল্লার সানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২), মাঝের মহল্লার আবদুর নূরের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (১৭), পাড়াগাঁও মহল্লার শমশের মিয়ার ছেলে মোজাক্কির মিয়া (৪০), কামালহানি মহল্লার নয়ন মিয়া (১৮), যাতুকর্নপাড়া মহল্লার আবদুর রউফের ছেলে তোফাজ্জল (১৮) ও পূর্বঘর গ্রামের দলাই মিয়ার ছেলে সাদিকুর (৩০)। বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামীমা আক্তার নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
যশোরের চিত্রা মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন জাবির ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এতে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন—চয়ন (২০) ও সেজান হোসেন (১৯)। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'আটজনই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। এছাড়া দগ্ধ ২৪ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।'
ঝিনাইদহে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
আজ সোমবার বিকেলে শহরের আদর্শপাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা সদরের ৯ নম্বর পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ওরফর হিরণের বাড়িতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। তাঁর লাশ রাতে শহরের পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষোভকারীরা।
ঢাকার সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আজ সোমবার রাতে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের একজন রমজান (৩৫) মাছের আড়তের কর্মচারী। তিনি সকালে আড়ত থেকে বাসায় ফেরার সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে রমজানের বুকে গুলি লাগে। হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা রমজানকে মৃত ঘোষণা করেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন আন্দোলনকারী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর থেকে শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ মোড় ও বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যের কয়েকটি বাসে করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। বাসগুলো মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আসলে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আটকে দেয়। দুটি বাসে থাকা প্রায় ৮০জন বিজিবি সদস্যদের মুলাইদ এলাকার বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশনের সামনে আটকে দেয়। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা তাদের ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ সদস্য ও তারা হিন্দি কথা বলে প্রচার করে। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কাছে থাকা অস্ত্রসহ গোলাবারুদ আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা বস্তায় ভরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একপর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেন।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে আজ সোমবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে দুটি প্রধান ফটক ও ভেতরে ভাঙচুর করেন। এ সময় আনাসার সদস্যরা গুলি ছোড়ে। গুলিতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
আহত ব্যক্তিদের সফিপুর মডার্ন হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও তানহা কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি ও বাসন থানায় হামলা চালিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালা এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে এলিম হোসেন (৩০), অপর এক যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাঁর বয়স আনুমানিক ৪০ বছর।
চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হল পাড়ায় জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলমের বাড়িতে দেওয়া আগুনে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় রাত সাড়ে আটটায় এ খবর লেখা পর্যযন্ত নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পোড়া বাসভবন থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারম্যান মো. বশির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুপুরে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনে একদল দুর্বৃত্ত অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় আজ সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন তিনজন।
নিহত তিনজন হলেন, রাসেল (২৫), আব্দুর রহমান (৩০) ও রাকিব হোসেন (২৪)। চারটি মরদেহ আনা হয়েছে যাত্রাবাড়ি-কাজলা এলাকা থেকে ও দুটি মরদেহ আনা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের কাছে নতুন ভবন এলাকা থেকে।