সূচনা - (Barisal)
প্রকাশ ২৪/০৫/২০২৩ ০২:২৩পি এম

জ্ঞানের বোঝাপড়া : পৃথিবীতে এমন কোন গ্রন্থ আছে কি যেটি না বুঝে পড়তে বলা হয়েছে?

জ্ঞানের বোঝাপড়া : পৃথিবীতে এমন কোন গ্রন্থ আছে কি যেটি না বুঝে পড়তে বলা হয়েছে?
আচ্ছা মানুষ কেন বই পড়ে?

নিশ্চই জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করাটা বই পড়ার অন্যতম উদ্দেশ্য। মানুষ কোন বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করার জন্য বই পড়ে থাকে, বই মানুষের জ্ঞান ভান্ডারকে সূক্ষ্ম জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ করতে সাহায্য করে,মনুষের মননকে সুগঠিত করে, সহনশীল করে ।

আমরা যখন একটা বই পড়ি অবশ্যই সেটা বুঝে পড়ার চেষ্টা করি। বইটি যদি অন্য কোন ভাষায় হয় , এবং সেই ভাষা বোঝার দক্ষতা যদি আমাদের না থাকে তখন আমরা চেষ্টা করি এর একটা মানসম্মত অনুবাদ বই সংগ্রহ করার। এটা আমরা কেন করি ? অবশ্যই বইটিতে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করার জন্য। অর্থাৎ বইয়ের কথাগুলো আমরা জানার চেষ্টা করি, বোঝার চেষ্টা করি।

আচ্ছা নাবুঝে পড়ার জন্য পৃথিবীতে কোন গ্রন্থ কি লেখা হয়েছে ? যেটি আপনি কেবল পড়েই গেলেন কিন্তু বইটিতে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই হলো না। শুধুমাত্র আপনি কিছু সওয়াব লাভের আশায় বইটি পড়ে গেলেন। আচ্ছা আপনি যদি বইটিতে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে না ই জানলেন তাহলে আপনার বাস্তবিক জীবনে বইয়ের শিক্ষাটাকে কিভাবে বা প্রয়োগ করবেন ? বলা হয়ে থাকে, পবিত্র কুরআনে মানুষের প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তা তার বাণীসমূহ বর্ণিত করেছেন।এখানে রয়েছে মানুষের জীবনাচরণ সম্পর্কে সঠিক দিক নিদর্শন। আপনি যদি সেই বাণীর মর্মার্থই না বুঝতে পারেন তাহলে কিভাবে আপনার জীবন দর্শনে এর প্রতিফলন ঘটবে। আর প্রত্যাহিকতায় আপনি শুধুমাত্র পুণ্য লাভের জন্য যে আদর্শ চর্চা করে যচ্ছেন তার সঠিকতাই বা কিভাবে যাচাই করবেন ! সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল ,আমরা দিনের পর দিন না বুঝে কুরআন পাঠ করে গেলাম অথচ বাস্তবিক জীবনে তার কোন প্রয়োগই ঘটল না এভাবে কি আদতেই পূণ্য অর্জন করা যায়?

ধর্মীয় জ্ঞান অবশ্যই মানুষকে নৈরাজ্যের পথে পরিচালিত করে না যদি সে জ্ঞান হয় যৌক্তিক এবং সঠিক। ধর্ম নিশ্চয়ই অযৌক্তিকতার নির্দেশ দেয়না,তবে সেই জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ধর্মগ্রন্থে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে হবে। আর তা না করে যদি শুধুমাত্র পুণ্য লাভের আশায় দিনের পর দিন নাবুঝে না জেনে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে যাই তাহলে ভ্রান্তির পথে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

ধর্ম দর্শন একটি আধ্যাত্মিকতার বিষয় আর আধ্যাত্মিকতা অবশ্যই না বুঝে হবে না। বিষয়টা অনেকটা এরকম হয়ে গেছে যে আমরা ভাবছি যে আমরা ধর্ম চর্চা করছি, কিন্তু আদতে দেখা যাচ্ছে যে আমরা আমাদের প্রত্যাহিতায় শুধু কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানই পালন করছি, কিন্তু আমাদের জীবনাচরণে ,নীতি- নৈতিকতায় ধর্মীয় আদর্শের কোন প্রতিফলনই ঘটছে না। যার অন্যতম কারণ হলো না জেনে না বুঝে কোন আদর্শকে না ধারণ করে কেবলমাত্র তথাকথিত পূণ্য লাভের আশায় সেই আদর্শের নাম ধারণ করা। একটা গল্প খুব প্রচলিত আছে যে, ”কোন এক সরকারি কর্মকর্তা বলছেন যে আমার নামাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি টেবিলের নিচ দিয়া ঘুষটা দেন”! দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে আমাদের সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিষয়টা অনেকটা এরকমই হয়ে গেছে।

শুধু যে ধর্মীয় জ্ঞান বা শিক্ষার ক্ষেত্রে এরকম সেটা তো নয় কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে বিষয়টা জাস্ট মাথায় আসলো তাই লিখে ফেললাম । যে কোন জ্ঞান অর্জনের জন্যই বিষয় সমূহের গভীরে প্রবেশ করা অত্যন্ত জরুরি, হোক সে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান , বাস্তব জ্ঞান কিংবা কোন আদর্শিক জ্ঞান। বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেমনটা দেখা যায় আমরা শুধুমাত্র বিষয় ভিত্তিক কিছু নোট পাতি মুখস্ত করেই একটা হাই সিজি অর্জন করলাম। হতে পারে সেই সার্টিফিকেট দিয়ে আমরা যেকোনো একটা উচ্চ পদেও অসিন হলাম । তবে জ্ঞানকে ধারণ না করে শুধুমাত্র গলাধকরণের মাধ্যমে আমরা যে পর্যায়ে ই পৌঁছাই না কেন ব্যক্তি মানুষের বিকাশে সেটি কোন কাজেই আসবেনা। যার প্রতিফলন প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাচ্ছি । এমনকি শিক্ষা ক্ষেত্রেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেবলই ক্ষমতার চর্চা, আদর্শিক শিক্ষা সে যেন এক সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন প্রবেশ করেছে এক বিষাক্ত প্রতিযোগিতার ধারা। যা আমাদের মননকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত থেকে বিষাক্ততর করে তুলছে।

অথচ যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক জ্ঞান চর্চার আবহ গড়ে তোলা যেত তবে কতই না স্বচ্ছ ,সুন্দর পথে পরিচালিত হতো আমাদের জীবন দর্শন!

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ