বল্টুর ইদকীর্তি(একটি শিশুতোষ হাসির ছোটগল্প)
বল্টু জমশেদপুর গ্রামের একচ্ছত্র অধিপতি (ফাজিলের একশেষ), তার রয়েছে ৪ সদস্যের এক দল সেনা(বিচ্ছু বাহিনী), তারা হচ্ছে রমজান, ঝন্টু,অপু আর প্রবির।তারা সবাই জমশেদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। গ্রামের সবাই তাদের জ্বালায়
অতিষ্ট কিন্তু বল্টু চেয়ারম্যান সাহেবের একমাত্র ছেলে তাই কেউ কিচ্ছু বলতে সাহস পায় না।বল্টুদের অন্যতম কাজ হচ্ছে রাস্তার মধ্যে জুনিয়র কোন ছোট ভাইকে দেখলে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়া,স্কুলে কেউ ভালোমন্দ খেলে তাকে ডেকে এনে ধাক্কা দিয়ে জোড়পূর্বক তার খাবার খেয়ে নেওয়া।ছোট বাচ্চা দেখলে খামাখাই চিতকার দিয়ে ভয় দেখানো, স্কুলে তাদের প্রত্যেক ক্লাশে মার খেতে হয় তাই তারা প্রায়ই ক্লাস থেকে পালিয়ে নদীর পাড়ে যেয়ে বসে গাছের পাতাকে সিগারেটের মত করে টেনে এমন ভাব নেয়,দূর থেকে গ্রামের মানুষ ভাবে সত্যি সিগারেট খাচ্ছে।কিছুদিন আগে অংকের শিক্ষক 'পরিতোষ বাবু'তাদের খুব পিটিয়ে আগের একটা কাজের বদলা নিয়েছিলেন। পাল্টা হিসেবে ঐ রাতেই বল্টুরা মিলে উনার বাড়ি থেকে উনার(স্যারের)ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলটা চুরি করে নিয়ে এসে পাশের গ্রামের 'কসাই রফিককে' দিয়ে দেয়।চুক্তি ছিল ২ দিন ভরপেট মাংস খাওয়াতে হবে।কিছুদিন আগে তারা বাংলা ক্লাস করে খুব বোর হয়ে গেল,তাই ক্লাস শেষ হতেই বল্টু তার সেনাদের বলল ইশারায় 'চিমা'অস্ত্র ব্যবহার করতে।(চিমা হচ্ছে তিন আংগুল একত্রে করে পিছনে বসে মানুষের পিঠের ঠিক মাঝখানে ধনুকের মত আস্তে আঘাত করা,সাথে সাথেই ভিকটিম ব্যাথায় ককিয়ে উঠবে)।চিমা দেওয়ার সাথে সাথেই পুরো ক্লাস চিতকার শুরু করে দিল।শোরগোল শুনে পাশের ক্লাস থেকে পরিতোষ স্যার এসে হুংকার দিলেন এবং কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ক্লাস ক্যাপ্টেন আরিফ বলল 'স্যার,সারা ক্লাসে 'চিমা' দেওয়া হচ্ছে'।স্যার জিজ্ঞেস করলেন: 'চিমা কি রে'?।আরিফ স্যারকে বুঝিয়ে বলল।স্যার হাসতে থাকলেন আর বল্টুকে বললেন,"তোর চিমার এতো শক্তি? হা হা হা,আয় তো আমার পিঠে একটু দে।"বল্টু না না করলেও উনার চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে 'চিমা' দিল স্যারের পিঠে।স্যার চিতকার করে উঠলেন "ওরে হারামজাদারে, মেরে ফেলেছিস রে,তোরা কে কোথায় আছিস রে,ওরে ধর রে,হারামজাদা করলি কি রে"। কাউকে কোন সুযোগ না দিয়ে তারা ৫ জনেই ভোঁ দৌড় দিল।এভাবেই চলছিল বল্টুর জীবন কিন্তু হঠাৎ একটা ঘটনা ওর জীবন পাল্টে দিল (এই প্রসঙ্গে পরে আসব)।বল্টু তার বাবার পুরান বাড়িতে জরুরী মিটিং ডাকল।মিটিং এর বিষয় হচ্ছে বল্টুর বাবা চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে জাতিসংঘের ইউনিসেফ থেকে শিশুদের জন্য খাবার,কাপড় চোপড় এসেছে কিন্তু তার বাবা কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে সেগুলো বিক্রি করে দিতে চাইছেন।বরাবরের মত বল্টুর প্লান হচ্ছে গুদাম ঘর থেকে সব চুরি করে আনা তবে এবার উদ্দেশ্য ভিন্ন কাজ।
বল্টু :তোরা সবাই রাত ১২ টার মধ্যে আমগাছের তলায় চলে আসবি।ঝন্টু:আমার খুব ভয় হচ্ছে রে।রমজান :কি রে বল্টু, এই সব মেয়ে মার্কা ছেলে দলে কেন রেখেছিস,দেখ ভয়ে প্যান্টে মনে হয় প্রস্রাব কতে করে দিয়েছে,হা হা হা।ঝন্টু:এই হারামজাদা, আমি কখন এরকম করলাম,ভুলে যাচ্ছিস কেন,আগেরবার যখন আম চুরি করতে গেলাম ধরা খাওয়ার পরে তুই তো সত্যি প্রস্রাব করে দিলি, হা হা হা।প্রবির:তোরা থামবি?কি খালি বাচ্চাদের মত ঝগড়া করিস।আচ্ছা বল্টু এখন বল,কালকে পাশের গ্রামের সব গরীব শিশুদের 'রফিক কসাইয়ের'বাড়িতে দুপুরে ১২টায় আসতে বললি,কারণ কি?ইদের সময় বাচ্চাদের মারধোর করলে কেমন হয়ে যাবে না।বল্টু:ধুর গাধা!মারব কেন?অন্য প্ল্যান আছে, কালকে দেখবি।অপু:সব বুজলাম।কিন্তু আমাদের মিশনের নাম কি হবে।
বল্টু:মিশন ইম্পসিবল।
সবাই একসাথে বলল:জয় মিশন ইম্পসিবল।পরের দিন মানে ইদের আগের দিন বল্টু এবং তার বাহিনীকে চেয়ারম্যান এর নির্দেশে ধরে আনা হল,বল্টু ছাড়া বাকি সবাইকে গাছের সাথে বেধে রাখা হল।বল্টুকে তার বাবা চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,"টাকা কি করেছিস হারামজাদা? জলদি দিয়ে দে,কত বড় সাহস তোর আমার জিনিস চুরি করিস"।বল্টু:বাবা,তুমিও তো চুরি করেছ।বাবা:তুই কি করেছিস? (হা হা হা)ডাকাতি? এমন সময় কসাই রফিক ও হাজির হল আর বলল,"চাচা,আপনার ছেলে চুরি করেছে সত্যি কিন্তু তা সে সব গরীব বাচ্চাদের দান করে দিয়েছে,আমি সামনে ছিলাম,চাচা।ওর মতো মানুষের কারণে আজ অনেক বাচ্চার মুখে হাসি চাচা।"চেয়ারম্যান সাহেব চুপ হয়ে গেলেন আর বললেন, "কে আছিস,জলদি ছেলেগুলোর বাধন খুলে দে,এখানে নিয়ে আয়।"হঠাৎ করে চেয়ারম্যান কাঁদতে শুরু করলেন।বল্টু:বাবা,কাদছো কেন?বাবা:আমাকে তোরা মাফ করে দে বাবারা,যে কাজটা আমার করার কথা ছিল তুই আমার ছেলে হয়ে সেই কাজটা করে আমাকে দেখিয়ে দিলি বাবা,আমি খুব লজ্জিত রে।আমি তোদেরকে সালাম জানাই।যা তোরা ঘোষনা করে দে আগামীকাল ইদের দিন আমি নিজের টাকায় এই গ্রামের সব বাচ্চাদের কাপড় কিনে দিব।
সবাই খুশিতে চিতকার দিল।বাবা:বল্টু,তোর এই পরিবর্তন কি করে হল?
বল্টু বলা শুরু করল,"কিছুদিন আগে আমরা কয়েকটা বাচ্চার সাথে শয়তানী করতে যেয়ে তাদের কাপড় ছিড়ে দিয়েছিলাম। তারা অস্বাভাবিক কান্না করতে দেখে বললাম আরেকটা কাপড় কিনে নিলেই তো হয়,তারা জানাল তাদের একটাই জামা,এটা দিয়েই তাদের ইদ হবে,তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে সে বলল,ভাই আমার কাপড়টা না ছিড়ে আমাকে একটু মার দিয়ে ছেড়ে দিলেন না কেন?তাইলে আপনাদের ও মন ভরতো আর আমাদেরকে খালি গায়ে থাকতে হতনা।খুব ছোট লাগছিল,কি করলাম আমরা,তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাবা।"বাবা:তোদের মিশনের নাম কি ছিল?বল্টু:মিশন ইম্পসিবল। বাবা:জয় মিশন ইম্পসিবল। সবাই একসাথে বলে উঠলো :জয়,মিশন ইম্পসিবল।
লেখক:তালুকদার তুহিন