ভূঞাপুরের পল্লী লেখক মেছের আলী তালুকদার আর নেই
টাঙ্গাইল ভূঞাপুর উপজেলার লেখক ও ছড়াকার মোঃ মেছের আলী তালুকদার ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্না লিল্লাহি.....রাজিউন)। সে অত্র উপজেলার কুকাদাইর গ্রামের মৃত হুরমুজ আলী তালুকদারের বড় ছেলে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ীত অবস্থায় তার নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, আত্নীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মেছের আলী তালুকদার ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল অত্র উপজেলার কুকাদাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের ৪ মাস পর বাতাস লেগে (প্যারালাইজড হয়ে) এক পা অবশ হয়ে যায়। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। এরপর প্রতিবন্ধীত্ব জীবনে নানা প্রতিকূলতা, অভাব-অনটনে ও নিজ ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে ১৯৮৯ সালে তিনি গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক (এসএসসি) পাশ করেন। এরপর ১৯৯১ সালে তিনি সুনামের সাথে আয়ে (এইচএসসি) পাশ করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন। এসময় এলাকায় শিক্ষিত লোকের বড়ই অভাব ছিল। অনেকে তার কাছে দলিল লেখালেখি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পূরণ ও নির্বাচনী প্রচারে কবিতা লিখে নিতে আসতো।
এরপর আবারও ২০০৪ সালে প্যারালাইজড হয়ে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের কালোছায়া। দীর্ঘ ১৮ বছর ঘরে শয্যাশায়ীত অবস্থায় ডায়াবিটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গতকাল মঙ্গবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে রাউৎবাড়ী ঈদগাহ মাঠে রাত সাড়ে ৯টায় জানাজা নামাজ শেষে ওই কবরস্থানেই তাকে চির নির্দায় শায়িত করা হয়।
মরহুমের একমাত্র ছেলে আল আমিন তালুকদার বলেন- আমার বাবা দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে প্যারালাইজড হয়ে ঘরে পড়েছে। এসময় তার একমাত্র সঙ্গী ছিলো কলম। আর দীর্ঘ সময়ে তিনি অসংখ্য গল্প, ছড়া, জারি ও সাহিত্য লিখে গেছেন। তার অনেক ইচ্ছে ও স্বপ্ন ছিলো লেখাগুলো প্রকাশ করতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এমনকি তিনি মৃত্যুর পূর্বে বলে গেছেন তার লেখাগুলো পাবলিস্ট করা সম্ভব না হলেও অন্তত এলাকায় মাইকিং করে যেনো প্রচার করা হয়। তিনি আরো জানায়, ভবিষ্যতে কোনো প্রকাশনা কোম্পানির সহযোগিতা পেলে বাবার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে চাই।
স্থানীয় সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন- মরহুম মেছের আলী তালুকদার জন্মের পর থেকেই প্যারালাইজড হয়ে প্রতিবন্ধী হন। এরপর প্রতিবন্ধীত্ব জীবনেও নানা বাধা পেরিয়ে তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি গ্রামের হত-দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়াতেন। তিনি আমার জানামতে অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন। এসময় তিনি মরহুমের মৃত্যুতে শোক ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।