Azizur Rahman babu - (Shariatpur)
প্রকাশ ১৫/০৩/২০২২ ০১:১৫পি এম

যে ইতিহাস কেউ মনে রাখেনা !

যে ইতিহাস কেউ মনে রাখেনা  !
একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক মরহুম হাজী মতিউর রহমান ওরফে ছোয়াব আলি মাষ্টার একজন শিক্ষিত দেশপ্রেমী, সমাজসেবী জনদরদী মানুষ ছিলেন । একজন কৃষকের সন্তান হয়েও ছিলো না কোন অহংকার কিংবা আত্মগৌরব। সবসময় অন্যায়ে বিরুদ্ধে সোচ্চার কন্ঠ ছিলেন। নিজের সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাশাপাশি দেশ সেবাও করেছেন।

সময়টা ছিলো জাতীয় পার্টির আমল । সখিপুর তফসিল অফিস থেকে চরভাগা ইউনিয়নের কৃষকদের উপর ১৭ বছর খাজনা দেওয়ার জন্য চরম নোটিশ জারি করা হয়। হতবিহ্বল কৃষক সমাজ।

সেই সময় কৃষক সমাজ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। কী কঠিন মানষিক চাপ। তাঁরা এই মূরুব্বীর কাছে আসলেন। মূরুব্বী সরকারের এই অন্যায় নোটিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন। সেই সময়ে সখিপুর তফসিল অফিসের তহশিলদার ছিলেন জনাব সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে খাজনা বাবদ প্রায় ১৮ লাখ টাকা নিয়ে পকেট ভারি করে চলেছেন।

তত্কালিন ভেদরগন্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কার্যে বাধা দেওয়া এবং খাজনা আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কারণে মরহুম হাজী মতিউর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে সোকজ করা হয়। এমতাবস্থায় এলাকার এলিট শ্রেণীর অবস্থা সম্পন্ন কৃষকদের নিয়ে প্রেক্ষাপট বর্ননা করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

ইতিমধ্যে শ্রদ্ধেয় মূরুব্বী ও তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রকে সেই সময় জাতীয় পার্টি সরকারের মাননীয় ভূমি মন্ত্রী সুনীল গুপ্তের এমপি মহোদয়ের সাথে মিন্টু রোডস্থ সরকারী বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। খাজনা আদায়ের অবৈধ কার্যকলাপের বিষয় বৃত্তান্ত টেনেন্সি এক্ট ৮৬ ধারা অনুযায়ী আইনী যুক্তি প্রদর্শন করেন। মন্ত্রী মহোদয় আইনী ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং তত্কালীন শরিয়তপুর জেলাপ্রশাসককে বিধান মোতাবেক লিখিত ভাবে নদীভাংগা এলাকায় ৪ বছরের খাজনা নেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

সেদিন ঢাকা অবস্থান করার সময় মূরুব্বী হাজী মতিউর রহমানের বিশ্বস্ত সংগী মরহুম মোহাম্মদ আলি দেওয়ান মারফত জানতে পারেন সখীপুর তফসিল অফিসের তহশিলদার সাখাওয়াত হোসেন অনত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এই সংবাদ অবগত হওয়ার পর তিনি সাথে সাথে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন। তহশিলদার সাখাওয়াত হোসেনের বদলীর ঘটনা সত্য।

অতঃপর তত্কালীন বিভাগীয় কমিশনার জনাব বদিউর রহমান সাহেবকে লিখিত ভাবে জানালে তহশিলদার সাখাওয়াত হোসেনের বদলি আদেশ স্হগিত করা হয়। উক্ত সাখাওয়াত হোসেন বিধান মোতাবেক খাজনা নিয়ে বাকী টাকা কৃষকদের ফেরত দিতে বাধ্য হন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে যথাযথ উপস্থিত হয়ে খাজনা দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। " নদী ভাংগা কৃষকদের নদী স্বীকস্তি আইন যা টেনেন্সি এক্ট ৮৬ ধারা মোতাবেক জমির ৪ বছরের বেশী খাজনা নেওয়া যাবে না "।

পরবর্তীতে ১৭ বছরের খাজনা দেওয়ার পরিবর্তে ৪ বছর খাজনা দেওয়ার নিয়ম প্রচলন হয়। এমনকি সেই সময় বহু কৃষক ৪ বছর খাজনা দিয়েছিলেন। ১৩ বছরের খাজনা মওকুফ করা হয় - কৃষকেরা সেই রক্ষায় বেঁচে যান।

এলাকার এমন মহতী কার্যক্রমে সাথি হিসেবে মরহুম শ্রদ্ধেয় আলম চান প্রধানীয়া ও মরহুম শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ আলি দেওয়ানের শ্রম ও পরামর্শ স্মরণীয় ছিলো।

বর্ষাকালে রাত বিরাতে লোকজনের আনাগোনা আর মোহাম্মদ আলি দেওয়ানের সান্নিধ্যে সময়গুলো আজও স্মৃতি হ'য়ে অন্তরে রয়ে যাবে। আজ তাঁরা জীবিত না থাকলেও তাদের দেশপ্রেম ভুক্তভোগীরা কী কখনো মনে রাখেন ?

এলাকার কৃষকদের কল্যাণে এমন কৃতিত্ব পূর্ণ কর্মকাণ্ড করার পরও পরবর্তীতে কোন সুধীজন স্মরণে রাখেতে চাইলেন না। এটাই চরম বাস্তবতা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কেউ নেই। সেই ৮০ দশকের মাঝামাঝিতে এমন মহতী কার্যক্রম ইতিহাস ঠিকই সাক্ষী হয়ে থাকবে।

বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এই স্মৃতিচারণ। যে দেশে গুনীমান্যি লোকেরা সন্মানিত হয় না - সে দেশে কী গুনীজন জন্মায়.... ???

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ