MD. MAMUNUR RASID - (Lalmonirhat)
প্রকাশ ১৫/০৩/২০২২ ০১:১৫পি এম

১০হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও মিলছে না বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ, নষ্ট হচ্ছে ১১০বিঘা জমির ধান

১০হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও মিলছে না বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ,  নষ্ট হচ্ছে ১১০বিঘা জমির ধান
বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ১০হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেচের অভাবে নষ্ট হচ্ছে ১১০ বিঘা জমির বোরো ক্ষেত। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, বোরো চাষে ফলনশীন এলাকা ওই ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রাম। তেল চালিত শ্যালো মেশিনের সেচ দিয়ে প্রতিবছর বোরো চাষাবাদ করতেন এখানকার চাষিরা। গত ২০১৮ সালে সেচ সংকট দুর করতে স্থানীয় কৃষক মৃত আসমত আলীর ছেলে মোক্তার আলী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আদিতমারী থেকে সেচ পাম্পের অনুমাদন নেন। পরে নিজের টাকায় ট্রাসফরমার ক্রয় করে সেচ পাম্পের সংযোগ নেন। যার হিসাব নং -০৭/২৬৫/১০১২। ওই গ্রামের কৃষকদের ১১০বিঘা জমির বোরো ক্ষেতে এ সেচ পাম্প দিয়ে পানি দেয়া শুরু হয়। বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের কারনে বোরো ফলনও বেড়ে যায়। চলতি বোরো মৌসুমেও ওই সেচ পাম্পের আওতায় ১১০বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ শুরু করেন গ্রামের চাষিরা।

বোরো ধানে সেচ কাজ চলমান অবস্থায় গত ৩মার্চ হাঠাৎ ওই সেচ পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী সাব জোনাল অফিস। এ সময় সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারন জানতে চাইলে সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলীকে অফিসে ডাকা হয়। মোক্তার আলী তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ অফিসে গেলে তাকে একটি খাবার হোটেলে নিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করে নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজিএম) মোস্তফা কামাল। পরে ওইদিনই তার হাতে ১০হাজার দেন মোক্তার আলী। টাকা নিয়ে পরদিন সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও ১১দিনেও ওই সেচ পাম্পের সংযোগ দেয়া হয়নি। এদিকে দীর্ঘ সময় পানি না থাকায় ধানের ক্ষেত ফেটে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে ধান গাছ মরে যেতে পারে বলে জানান কৃষকরা।

কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গত ৫বছর থেকে ওই সেচ পাম্প থেকে দিয়ে বোরো চাষাবাদ করে আসছি। এবার বোরো চাষের মধ্যবর্তি সময় হঠাৎ সেচ বন্ধ থাকায় পানির অভাবে বোরো ক্ষেত মরে যেতে শুরু করেছে। ধান না হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। আর সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলী বলছে, বিদ্যুৎ অফিস অযথা লাইন কেটে দিয়েছে। তারা যদি লাইন কেটে দিবে। তবে চাষাবাদ শুরুতে কেন কাটলো না? তখন কাটলে তো আমরা বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করে চাষাবাদ করতাম। এখন কিভাবে ক্ষেতে পানি দেই। ১১০ বিঘা জমির ধান নষ্ট হতে বসেছে।

সেচ পাম্প মালিক মোক্তার আলী অভিযোগ করে বলেন, নিজের টাকায় ট্রাসফরমার কিনে প্রায় ৬বছর ধরে ১১০ বিঘা জমির সেচ দিচ্ছি। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া নেই। হঠাৎ গত ৩ মার্চ বিদ্যুতের ডিজিএম এসে কোন কিছু না বলেই লাইন কেটে দেয়। কারন জানতে চাইলে তিনি আমাকে অফিসে আসতে বলেন। আমি অফিসে গেলে ডিজিএম একটি খাবার হোটেলে নিয়ে কথা বলেন। এসময় তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারা পরদিন সংযোগ দেয়ার কথা দিলেও তা আজও দেয়নি। এসময় তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পল্লী বিদ্যুতের হাজীগঞ্জ সাব স্টেশনের ইনচার্জ মোর্শেদ আলম বলেন, ওই পাস্প অনুমোদনকৃত স্থান থেকে সরিয়ে নেয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পূর্বের স্থানে ফিরে গেলে পুনরায় ওই সংযোগ দেয়া হবে। অন্যথায় বোরো ক্ষেত নষ্ট হলেও সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদিতমারী জোনাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজিএম) মোস্তফা কামাল ১০হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যে স্থানে অনুমোদন দেয়া ছিল সেখান থেকে পাম্প সড়ানোর কারনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শত বিঘা কেন? হাজার বিঘা বোরো নষ্ট হলেও পূর্বের স্থানে না নিলে সংযোগ দেয়া হবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ