KAMRUL ISLAM KAMAL
প্রকাশ ১৪/০৩/২০২২ ১২:৪১পি এম

নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাসের চেয়ারম্যানসহ ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাসের চেয়ারম্যানসহ ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব
নরসিংদীতে গ্রাহকদের দুই শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়া শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর অন্যতম হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব- ১১। শনিবার রাতে সদর থানাধীন ভেলানগর এলাকায় গোপন বৈঠক চলাকালীন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা নরসিংদীর মাধবদী থানার দক্ষিনচর ভাসানিয়া গ্রামের মৃত হাসান আলীর ছেলে সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম (৫০) এবং তার ০৪ সহযোগী সদর থানার ঘোড়াদিয়া গ্রামের মৃত জাফর আলী শিকদারের ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), সদর থানার বাখর নগর গ্রামের মৃত নূর চান কাজীর ছেলে কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), ঘোড়াদিয়া সাকুরঘাট এলাকার মৃত আঃ রশিদ মোল্লার ছেলে মোঃ সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও মোঃ নুরচান মোল্লার ছেলে আঃ হান্নান মোল্লা (৩০)।

রোববার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, ২০১০ সালে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় একটি শরিয়াভিত্তিক শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে একটি প্রতারক চক্র। প্রতারকচক্রটি অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদ মুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করে। ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ জনগণকে ভুল বুঝিয়ে তাদের সংস্থার সদস্য করা হতো। সুদমুক্ত জীবন যাপন ছিল তাদের প্রতিষ্ঠানের লোক দেখানো মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। উক্ত চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে ০৪টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ও অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়। আত্মীয় বা পরিচিতদেরকে তারা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিত। পরবর্তীতে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়ীক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; শাহ সুলতান এম.সি.এস. কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ, স্বদেশ টেক্সটাইল লিঃ, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিঃ ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লিঃ।

২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই গা ঢাকা দিলে বিষয়টি নরসিংদী জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। যার পরিপেক্ষিতে স্থানীয় পত্র-পত্রিকাসহ জাতীয় প্রিন্ট ও ইকেট্রনিক মিডিয়ায় তা বহুলভাবে প্রচারিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার তৈরী হয়। বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধনসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলতে থাকে। ঘটনাটি সারাদেশে প্রচারিত হলে নরসিংদীর সর্বস্তরের মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রæতিতে নরসিংদী জেলার পলাশ থানা পুলিশ প্রাথমিকভাবে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ শেষে বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নরসিংদীর পলাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি ভূক্তভোগীরা জেলা প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরেও অভিযোগ প্রদান করেন। সংঘটিত ঘটনায় ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার প্রত্যাশায় লিখিত অভিযোগ নরসিংদীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর কার্যলয়ে এসে জমা দেয়। র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে তাদের গ্রেপ্তার করে।

জেলার ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবি মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ে অতিরিক্ত লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশায় শত শত কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারাজীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ