ঘাটাইলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্তকে পাশকাটিয়ে প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন। এমন অভিযোগ এনে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও ঘাটাইলের ইউএনও মো. সোহাগ হোসেন প্রধান শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
জানা যায়, ৫ মার্চ ইউএনও মো. সোহাগ হোসেন বিদায়ী সাক্ষাৎ ও সংবর্ধনা নিতে ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। ভর্তি নিয়ে নানা অভিযোগ থাকায় চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির খোঁজ-খবর নেন। এক পর্যায় তিনি বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী হাজিরা খাতা পর্যালোচনা করেন। সেখানে অনুমোদিত তালিকার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য পান। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অনুমোতি ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ইউএনও ক্ষুব্ধ হন এবং সংবর্ধনা না নিয়েই সেখান থেকে চলে আসেন।
প্রথান শিক্ষককে পাঠনো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালে ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আসন সংখ্যা ছিল ২১০ টি। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত ছিল ১১ টি। অর্থাৎ ভর্তিযোগ্য ১০৯ টি। এর মধ্যে একজন ছাত্র ভর্তি ফি জমা দিতে বিলম্ব করায় তাকে ও তিনজন জমজ শিক্ষার্থীসহ মোট ভর্তি পরিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত ছিল ২০৩ জনের। কিন্তু হাজিরা খাতা বিশ্লেষণে দেখা যায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০৬ জন। ৭ম শ্রেণিতে চারটি শুন্য আসনের বিপরীতে লটারীতে বিজয়ী শিক্ষার্থী সংখ্যা ২১০ জন। হাজিরা খাতায় পাওয়া গেছে ২২৯ জনের নাম। ৮ম শ্রেণিতে ছয়টি শুন্য আসনের বিপরীতে লটারীতে বিজয়ী শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৪০ জন। হাজিরা খাতায় আছে ২২৬ জন। ৯ম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ২৮৭ জন। তার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ ২০১, মানবিক ৫৪ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩২ জন।
চিঠিতে উল্লেখ আছে, শিক্ষার্থীদের ভর্তি তথ্য পর্যালোচনায় স্পষ্টত প্রতিয়মান হয় যে, ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতিরেখে প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার নিমিত্তে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ সালে জারি করা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা পরিপন্থি ও অসদাচরণের শামিল।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপ ও অসদুপায় অবলম্বন করার জন্য কেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করা হবেনা তার কারণ পত্র প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগেও নারী কেলেঙ্কারি সহ বিভিন্ন বিভিন্ন অভিযোগ হওয়া সত্বেও বহালতবিয়তে স্বপদে বহাল রয়েছেন এ শিক্ষক। ৬ মার্চ রোববার ছিল ইউএনও মো. সোহাগ হোসেনের এ উপজেলায় শেষ কর্মদিবস ছিল। তিনি জানান, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটির তদন্তের ভিত্তিতে নতুন ইউএনও প্রয়োজজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, নিউজ করে লাভ নাই, একটু হয়রানি আর-কি।
তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।