দুই কণ্যা ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় নারী গ্রাম পুলিশ সাজেদা বেগমকে সংবর্ধনা
কথায় আছে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে গ্রাম পুলিশ আব্দুল জলিল সরদারের নির্মম হত্যা কান্ডের পর জীবিকা নির্বাহ ও তার দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহনের জন্য তার শূন্য পদে গ্রাম পুলিশের চাকুরীতে যোগদান করেন তার স্ত্রী সাজেদা বেগম। সকল প্রতিকূলতা জয় করে দু’মেয়েকে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার করতে পারায় নারী গ্রাম পুলিশ সাজেদা বেগম ও তার মেয়ে খুর্শিদা পারভিন পলিকে ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেছেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে গত মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা মা ও মেয়েকে সংবর্ধিত করেন। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলাধীন ক্ষেত্রলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের আয়মাপুর, মিনিগাড়ি, কোনাপাড়া গ্রামের দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ ছিলেন আব্দুল জলিল সরদার। ২০০৬ সালে ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখে ক্ষেতলাল উপজেলার ফাঁসিতলা রাস্তার মোড়ে নৈশ্য ডিউটি পালনকালে দুর্বৃত্তরা আব্দুল জলিল সরদার সহ তিনজন গ্রাম পুলিশকে জবাই করে হত্যা করে।
মৃত্যুকালে আব্দুল জলিল সরদার মুর্শিদা পারভিন জলি (১৮) ও খুর্শিদা পারভিন ওরফে পলি (১৩) নামের দুই কণ্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে সাজেদা বেগম সন্তানদের নিয়ে মহাবিপদে পড়েন। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা লোকমান হাকিম চাকুরির সুবাদে গ্রাম পুলিশ আব্দুল জলিল সরদারের সাথে পরিচয় হয় এবং তাদের মাঝে পারিবারিক ভাবে সু-সর্ম্পক গড়ে উঠে। আব্দুল জলিল এর মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের স্বল্প রোজগারে যখন তার কন্যাদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তখন পুলিশ কর্মকর্তা লোকমান হাকিম তাদের দুই কন্যার লেখাপড়ার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
জীবিকা নির্বাহ ও তার দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহনের জন্য পরবর্তীতে আব্দুল জলিল সরদারের শূন্য পদে জেলার মামুদপুর ইউনিয়নের ওই ওয়ার্ডে গ্রাম পুলিশের চাকুরীতে যোগদান করেন তার স্ত্রী সাজেদা বেগম। তার বড় মেয়ে মুর্শিদা পারভিন ওরফে পলি ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উর্ত্তীণ হয়ে ২০১৯ সালে মেডিকেল অফিসার হিসাবে চাকুরীতে যোগদান করে এবং ছোট্ট মেয়ে খুর্শিদা পারভিন ওরফে পলি ২০১৭ সালে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (রুয়েট) থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে।
সাজেদা বেগম জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সত্যিকারের একজন জয়িতা। তার সংগ্রামী জীবনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে। উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোসফেকুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (পাঁচবিবি সার্কেল) ইশতিয়াক আলম, জেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি শাম্মীম আজিজ সাজ, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি মাহবুবা সরকার, হৈমন্তী সরকার, আইরিন সুলতানাসহ জেলার সকল থানা হতে আগত নারী পুলিশ সদস্যবৃন্দ।