Azizur Rahman babu - (Shariatpur)
প্রকাশ ০৩/০৩/২০২২ ০১:২৯পি এম

সংসারে নারী অসহায় কেন ?

সংসারে নারী অসহায় কেন ?
সভ্যতার আলোকিত মানুষের রুপ বৈচিত্র্য বোঝা বড্ড মুশকিল। এঁরা ঘরে একরকম আচরণ দেখায় আবার বাইরে আরেক আচরণ দেখায়। এঁদের প্রকৃত আচরণ যে কোনটা স্বয়ং ভগবানও সিদ্ধান্তে স্হির থাকতে পারেন না। উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের পুরুষ শাসিত পরিবারগুলোতে এই বৈষম্য কঠোর ভাবে আমাদের চোখে ভেসে আসে।

আমরা পারিবারিক অথবা সামাজিক ভাবে নারীকে কতটুকু সন্মান করি ? দায়িত্ববান পুরুষরা কখনো কী বিবেক খাটিয়ে নিজকে প্রশ্ন করেছেন ? করেন নাই। কারণ পুরুষেরা যখন কোন ভাবনায় নিজকে লোকসান দেখেন... সে পথে বিবেচনা করেন না। বেশ কৌশলেই এড়িয়ে যান। এটা পুরুষদের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি।

আমরা জীবনের বেশীর ভাগ সময়ে নারীকে বেশ অবহেলার দৃষ্টিতেই দেখে থাকি। যার বহু নজির আমাদের কাছাকাছি পরিবারের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। বৌদের নিয়ে আড়ালে আবডালে সমালোচনা করি। কিন্তু নিজের পরিবারের বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করিনা। অথবা এসব নিয়ে ভাববার মত ইচ্ছে করেই সময় সুযোগ সৃষ্টি করিনা।

যে পূরুষ সংসারের স্বাভাবিক চাহিদা থেকে বেশী উপার্জন করেন তাঁর হামবড়া ভাবটা বেশীই থাকে। উনি টাকা কামাই করেন বিধায় ৯ টা - ৫ টা অফিস করে বাসায় এসে এমন ক্লান্তির ভাব করেন স্ত্রী যদি তাকে কোলে করে হাত-মুখ ধুইয়ে দিতেন - তবে নারী জনম সার্থক হতো।

পূরুষরা অবহেলিত হলে বৌ'দের বিড়ম্বনার শেষ নেই। শুধু তাই নয় । মানষিক নির্যাতন সহ শারীরিক নির্যাতন সয়ে সয়ে বহু নারী জীবনের মূল্যবান সময় নীরবে কাটিয়ে দেন। কারণ বৌ মাত্রই অবলা। এমন ঘটনা সিংহ ভাগ পরিবারেই হয়ে থাকে। মা- বাবার সামাজিক মানসন্মানের দিকে চেয়ে নিশ্চুপ থাকেন। আবার কখনো প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। কখনো ছোট ছোট শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে মুখ বুঁজে সহ্য করেন - করতেই থাকেন ।

অধিকাংশ পূরুষদের বদ্ধমূল ধারণা নারী হলো সন্তান তৈরির কারখানা । নারী হলো সন্তানদের লালন পালন করার ডে- নাইট কেয়ার সেন্টার । মাস গেলে মোটা অংকের টাকা দিতে হয় না। অবৈতনিক ভাবে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় একজন বোবা অনুভূতিহীন নারী সাদৃশ্য রক্তাক্ত জড়পদার্থের সাথে - আসলেই কী তাই.... জী। দ্বিমত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

বাস্তবতায় একজন পূরুষ বিয়ে করার পর ২/৩ বছর পর টাল্টু বাল্টু করে সংসার করার পর যখন মা বাবা হন । তখন নতুন বাবা হিসেবে ভাবখানা এমন হয় স্ত্রী ছাড়া তার কোন কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী হন সর্বেসর্বা।

তারপর সন্তান বড় হয়। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর যাওয়া আসা আর পড়াশুনার দেখভাল করতে করতে ঐ মা'কে অলিখিত ভাবেই আবার মেট্রিক পাশ দিতে হয় - সন্তানের রেজাল্ট হলে নিজেও আত্মতুষ্টিতে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন - আমিও জিপিএ ৫ পেলাম।

সুখী বাবার তার পরিবর্তন - পদবী আর বেতন বৃদ্ধি। তারপরও বাড়িতে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবা দেবর ননদের মানুষ করার বাড়তি টেনশন নিয়ে চলতে থাকে জীবন যাত্রা। নারী পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হলেও এই দীর্ঘ ২৫/২৬ বছরে অতিবাহিত সংসারে স্বামীর কখনো বলা হয়না " ভালোবাসি " শব্দটা। যা উভয়ের জীবনে জরুরী।

তারপরেও পূরুষের আত্মতৃপ্তির শেষ নেই। যত ভালো কিছু হয়েছে সব যেনো বাবারই অবদান - কারণ তিনি সরকারী চাকুরী করেন - খাবার যোগানদার । ছেলে আমার বড় চাকুরে হয়েছে - দেখতে হবে না ছেলেটা কার ? .... মা বেচারার অবদান যেনো তুচ্ছ.... আসলেই কী এমন ?... না'রে... ভাই !

পূরুষদের এই প্রকার আচরণ নারীকে স্বভাবতই অসম্মানিত করে। বিবেকবোধের কাছে লজ্জিত করে। পুরুষ পঞ্চান্ন / ষাটোর্ধ পার করলেই নিজের স্বাস্থ্যজনিত কারণে তেজ কমে যায়। যৌবনের তেজদীপ্ত সুর থাকেনা।

জীবনের হিসেব নিকেশ মেটাতে গিয়ে দেখেন জীবনের শেষ কালে সেই রূপবতী বৌ আর আজকের বৃদ্ধাজনিত বৌয়ের আচরণে কোন পার্থক্য নেই ৩০/৩৫ বছরের সংসারে শুরুতে যেমন ছিলো - আজো তেমনি আছে। পতিধন আজ নারীর কাছে দন্তবিহীন সর্পের মত লেজ গুটিয়ে আবেগহীন- কাচা পাকা চুলের সেই রমনীর কাছে নিজকে সোপর্দ করেন। ভালোবাসার চিরাচরিত আবেগে নিজকে আত্মসমর্পন করেন।

সংসার জীবনে প্রত্যেক নারী পুরুষের উচিত ভারসাম্য বজায় রেখে দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করা। বিবাহিত প্রথম জীবন আর শেষ জীবনে অর্থ সম্পদ তেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। যদি সত্যিকার অর্থে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা মিশ্রিত প্রকৃত বন্ধন বোঝাপড়া মাধ্যমে অটুট থাকে। স্বামী - স্ত্রী'র পবিত্র ভালোবাসার জয় হউক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ