পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলেই যৌতুক ও নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে স্বামীর চাকরি খাওয়ার হুমকি!
বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে যোগাযোগ করলেই অগ্নি-মূর্তি ধারণ করেন স্ত্রী । সেইসাথে সংসারে পান থেকে চুন খসলেই যৌতুক আর নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে সেনাবাহিনীর চাকরি খাওয়ার হুমকি তো আছেই! এভাবেই প্রায় ১৭ বছর ধরে স্ত্রীর যৌতুক অস্ত্রে নাজেহাল হয়ে পরেছেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত এক হতভাগ্য স্বামী।
সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা সদর হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া জান্নাতী বেগম নামের এক গৃহবধুর নির্যাতনের অভিযোগের সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমন উল্টো তথ্য। ঘটনার বিবরনে জানাযায়, গেল ২০ ফেব্রæয়ারি শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় গৃহবধু জান্নাতী বেগম। এরপর লালমনিরহাটের একটি ফেসবুক পেজে জান্নাতী বেগমের একটি ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হলে সেনাবাহিনীর সদস্য কতৃক স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনাটি ছড়িয়ে পরে।
ভিডিওটিতে গৃহবধু জান্নাতী বেগম অভিযোগ করেন,‘৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে না পেয়ে তাকে বর্বর নির্যাতন করেছে সেনা সদস্য স্বামী এরশাদুল হক। গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়ে পুড়ে দিয়েছেন দুই হাত! ১৭ বছর ধরে এমন নির্যাতনের মুখে সংসার করছেন তিনি, নির্যাতনকারী স্বামীর বিচার চান তিনি।’ গৃহবধুর এমন অভিযোগের সুত্র ধরে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানাযায়,‘ অভিযুক্ত স্বামী এরশাদুল সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের সাতপাটকী গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে।’
সেনাবাহিনীর চাকুরির সুবাদে বর্তমানে এরশাদুল বগুড়াতে থাকলেও তার স্ত্রী জান্নাতী ও দুই সন্তান থাকত গ্রামের বাড়ির সাথেই ভাড়া বাড়িতে! স্থানীয় প্রতিবেশিরা জানান, স্বামী এরশাদুলের ভাড়া বাসার পেছনেই ৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত এরশাদুলের বাবার বাড়ি! এরশাদুলের স্ত্রী জান্নাতী বেগম তার শ্বশুর-শাশুরির সাথে থাকতে চান না বলেই নিজ বাড়ির পাশেই ভাড়া বাড়িতে থাকে তারা। ঘটনার দিন কি ঘটেছিল তা জানতে চাইলে প্রতিবেশি গ্রামীণ ব্যাংক স্টাফ এর স্ত্রী বলেন,‘ সামান্য কথা কাটাকাটির আওয়াজ কানে এসেছে।’ তবে যখন গৃহবধু জান্নাতী চলে যায় তখন সে স্বাভাবিক ভাবেই বের হয়ে গেছে, অনেকেই দেখেছে।’
এসময় অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরাও বলেন,‘ গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে হাত পুড়ে দিলে তো চিৎকার চেচামেচি তাদের কানে আসত। কিংবা যাওয়ার সময় গৃহবধু আমাদের পোড়ানো হাত দেখিয়ে যেতে পারত।’ এসময় একাধিক প্রতিবেশি ও স্থানীয় ব্যক্তি উল্টো গৃহবধু জান্নাতী বেগমকেই দায়ী করে বলেন,‘ এরশাদের স্ত্রী প্রচন্ড রাগী, জেদী ও বদমেজাজী।’ ঘটনার বিষয়ে জানতে এরশাদুলের বাবার সাথে দেখা করে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে সেনা সদস্য এরশাদুলের কাছে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন,‘ বারবার কৌশল পরিবর্তন করে তাকে শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করছে তার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।’ যৌতুকের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন,‘ যা বেতন পাই তাতেই তো স্বচ্ছল আমি, যৌতুক কেন বারবার চাইব আমি? মূলত যৌতুক হল একটা অস্ত্র মাত্র! আর এই অস্ত্রের কাছে নতজানু হয়ে ১৭ বছর ধরে বেঁেচ আছি।
এর আগেও আমাকে ঘায়েল করতে একাধিকবার যৌতুকের অভিযোগ তোলা হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে। আমার একটাই অপরাধ হল আমি কেন বাবা,মা ভাই বোনের সাথে যোগাযোগ রাখি, কেন তাদের খোঁজ নেই? কেন আমি তার কথা মত পুরোপুরি চলি না? এসময় আক্ষেপ নিয়ে এরশাদুল আরও বলেন,‘ আমার বড় দূর্বলতা হচ্ছে চাকুরি টা।’ আমাকে বারবার হুমকি দেয় বেশি বাড়াবাড়ি করলে সে ও তার আতœীয়রা আমার চাকরি খাবে।
বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই আমার উপর চাপ আসতে থাকে। আমার স্ত্রী আমার বাবা মায়ের সাথে থাকবে না। শেষ পর্যন্ত হেরে গেছি আমি। নিজের বাবার বাড়ির পাশেই ভাড়া থাকতে হচ্ছে আমাকে। যখনই একটু মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি তখনই মিথ্যা অভিযোগ তুলে।
এরআগে একবার ডির্ভোস দিতে চেয়েছিলাম তখনও যৌতুকের অভিযোগ করা হয়েছিল আমার অফিসে। সেবার ৩ লক্ষ টাকার কথা বলেছিল। সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে তাদের কথামত চলতে বাধ্য করা হয়েছিল।
সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে চাকরি ধরে রাখতে অনেক অন্যায় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। এসময় এরশাদুল বলেন , সম্প্রতি আমি ছুটিতে আসলে পুর্বপরিকল্পিত ভাবে গেল ৩১ জানুয়ারি আমার উপর হামলা চালায় স্ত্রীর আতœীয়রা।
এরপর রংপুর সিএমএইচে ৮ দিন চিকিৎসা নিয়ে এসে থানায় একটা অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগ করার কারনে আমার স্ত্রী ক্ষুদ্ধ হয়। অকথ্যভাষায় বাবা-মা তুলে সবসময় গালি দিতে থাকে।
ঘটনার দিন ২০ ফেব্রæয়ারি আমি কর্মস্থলে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে স্ত্রী। এসময় আমি কিছুটা রাগ হলে সে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমার উপরে হাত তুলে। তখন দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছিল মাত্র। এরপর সে সুস্থ্য মানুষ চলে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পরবর্তীতে ফেসবুকে দেখি আমার স্ত্রী একটা ভিডিওতে বলছে আমি তার হাতে ছ্যাকা দিয়েছি, ৫ লক্ষ টাকা চেয়েছি।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও খোঁজ নিতে এরশাদুলের স্ত্রী জান্নাতী বেগমের সাথে যোগাযোগ করে তার স্বামীর পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাআলম জানান,‘ঘটনাটি মৌখিক ভাবে জেনেছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।