‘খোলা হল’ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শাবিপ্রবির সিন্ডিকেটে
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) হল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার পর জরুরি সিন্ডিকেটে হল ও ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট। সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে হলেই অবস্থান করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
তারা উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। চলে আমরণ অনশনও। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের পর শনিবার তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। এরপর রোববার সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরী সিন্ডিকেট সভায় সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ছাড়া মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে পারবে বলে সিন্ডিকেট জানায়। সরকারি অন্য বিধিনিষেধ না থাকলে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সশরীরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
এদিকে সোমবার ৩২তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করবে শাবিপ্রবি। এ উপলেক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যাল প্রশাসন।
২৮ দিন পর অফিস করলেন উপাচার্য
মাসব্যাপী আন্দোলনের পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রবিবার সকাল থেকে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন। তিনি বলেন, সকাল থেকে উপাচার্য দাপ্তরিক কাজ শুরু করছেন। বিকেলে কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এ ছাড়া এদিন সন্ধ্যা ৭টায় জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অংশ নেন।
এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় শিক্ষাামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন ২৫ দিন পর আধা ঘণ্টার জন্য কার্যালয়ে এলেও কোনো দাপ্তরিক কাজ করেননি। সে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে উপাচার্যকে নির্দেশনা দেন।
ছাত্রলীগের স্মারকলিপি
শাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রবিবার সকাল ১০টার দিকে উপাচার্যের কাছে সাত দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেছেন। স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক সজিবুর রহমান।
তিনি জানান, ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুষ্ঠু ও পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করতে তারা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে অতি দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া; দ্রুত অনলাইন ও অফলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু; ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন; হলের ডাইনিং ও ক্যানটিন খুলে দেওয়া; ডাইনিং, ক্যানটিন ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি ও দাম কমানো; পর্যাপ্ত আধুনিক ফুডকোর্টের ব্যবস্থা; নির্মাণাধীন ফুডকোর্টের কাজ শেষ করা; দেয়াল লিখন মোছাসহ ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়ে দাবি জানানো হয়।
এদিকে গত ১ মাস ধরে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেন। আবাসিক ছাত্রী হলের এক প্রভোস্টের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে তিন দফা দাবির আন্দোলন পরবর্তীতে রূপ নেয় উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে। ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে উপাচার্য পুলিশি হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যায়ল দিবস সম্পর্কে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ফোনে যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে আমরা অতীতের মতো করে পালন করব, তার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আরেকটি কথা হলো আগামীকাল ভালোবাসা দিবস, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও ভালোবাসা দিবসে সেই দূরত্ব ও সংকোচ দূর করতে চাই। আমি আশা করি আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে একত্র হয়ে আমাদের ভালোবাসা দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করব।’