Md.Nezam Uddin - (Chattogram)
প্রকাশ ১৩/০২/২০২২ ১১:৫১এ এম

ভালো ব্যবহার

ভালো ব্যবহার
ভালো ব্যবহার মানুষের অমূল্য সম্পদ। অমূল্য সম্পদ এই জন্যই বলছি, ভালো ব্যবহার টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না। ভালো ব্যবহার বাজারে বিক্রি হয় না। পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সনদ অর্জন করতে পারে। সনদের বিশেষ একটা মূল্য আছে। যার বৈষয়িক প্রয়োজন অপরিসীম, কিন্তু দুর্লভ নয়। মানুষের আচার-ব্যবহার এমন জিনিস যা দাম দিয়ে কিনতে হয় না। অথচ আজকাল এটি সমাজের বিরল।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ভালো ব্যবহারের বাহ্যিক মূল্য নিরূপিত না হলেও এই ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে একজন মানুষ কতটা মানুষ তা নিরূপিত হয়।

ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা যায়।অনেক সময় বড় বড় বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ভালো ব্যবহারের অধিকারী ব্যক্তির কাছে সমাজ বা রাষ্ট্র নিরাপদ থাকে। এমনকি পশু-পাখিও ভালো ব্যবহারই মানুষের বশ্যতা স্বীকার করে। এজন্য বাল্যকাল থেকেই শিশুকে ভালো ব্যবহারে অভ্যস্ত করা প্রত্যেক পিতা মাতার কর্তব্য।

ভালো ব্যবহার চর্চার কতগুলো উপায় আছে। ধর্মচর্চা তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। ব্যবহার ভালো না হলে পশুর সাথে মানুষের ব্যবধান কমে আসে। পশুত্ব শক্তি মানবিকতাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে।

আবার বিবাহের জন্য পাত্র পাত্রী খোঁজার সময় ভালো ব্যবহারের কদরটা আরো বেড়ে যায়। কারণ সবাই চায় ভালো ব্যবহারের বউ কিংবা ভালো ব্যবহারের বর। মোদ্দা কথা হল, যার নিজের ব্যবহার ভালো না, সেও ভালো ব্যবহার পছন্দ করে। অর্থাৎ ইহার অর্থ এই দাঁড়ালো যে, ভালো ব্যবহার সমাজের একটি অপরিহার্য ও কাঙ্খিত বিষয়।

সবাই অপরের নিকট হতে ভালো ব্যবহার আশা করে।
তার মানে ,যা আমি অন্যের কাছে আশা করি তা অন্যকে দেয়া জরুরী। ভালো ব্যবহার পেতে হলে ভালো ব্যবহার দিতে হবে। ভালো ব্যবহার সমাজ বন্ধনকে পাকাপোক্ত করে।

ব্যবহারে বংশের পরিচয় কথাটি সাদামাটা শোনালেও সেটি ধ্রুবসত্য। তবে এক গাছের সব আম একই রকম মিষ্টি হয় না। তেমনি এক বংশের সবাই একইরকম হবে এমনটিও নয়।

আবার লোকমুখে প্রচলিত কথা, ভালো ব্যবহারের পয়সা লাগে না -এ কথাটির বিশেষ গুরুত্ব আছে। জমিদার কৃষ্ণদেব যখন মুসলমানদের দাড়ির উপর কর ধার্য করেছিলেন তখন অনেক মুসলমান দাড়ি কাটা শুরু করে দিয়েছিলেন। টাকাপয়সা এইভাবে মানুষকে আদর্শচ্যুত করে ফেলে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, ভালো আচরণ বা ব্যবহার অর্জন করতে টাকাপয়সা না লাগার কারণে লোকে এটিকে তুচ্ছ ভাবতে শুরু করে। ভালো ব্যবহার যে মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তা ক'জনই বা মানে।

আমরা হো হো করে হেসে সারাবেলা কাটিয়ে দিতে পারি কিন্তু পরশ্রীকাতর মানুষ অন্যের সাথে কথা বলার সময় একটু হাসিমুখে থাকতে সে কুণ্ঠাবোধ করে। একটু হাসিমুখে কথা বললেই যে আরেকজন আনন্দ পেতে পারে, নিজের দুঃখ ভুলে যেতে পারে তা আমরা তোয়াক্কা করি না। যিনি হাসিমুখে কথা বলেন, ছোট বড় সকলের কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন তিনিই ভালো ব্যবহারের অধিকারী।

তবে সমাজে দু' চারজন ভন্ড শ্রেণির মানুষ আছেন যারা মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। কিন্তু ভালো ব্যবহারকে পুঁজি করে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। এমন লোক দেখানো ভালো ব্যবহার মূলত ভালো ব্যবহার নয়।

এক আগন্তুক এক লোককে জিজ্ঞেস করলো, এই গ্রামের রহমত সাহেবের বাড়ি কোথায়, দয়া করে একটু বলবেন?
উত্তরে লোকটি রুক্ষভাবে বলল, আমি রহমতের বাড়ির দারোয়ান নাকি? নিরুপায় হয়ে লোকটি একা একা রহমত সাহেবের বাড়ি খুঁজতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর একটা গাছের ছায়ায় বসে থাকা একজন লোককে জিজ্ঞেস করলেন, রহমত সাহেবের বাড়ির কথা। লোকটি অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে বললেন, আসুন আমার সাথে। ওই আগন্তুককে লোকটি রহমত সাহেবের বাড়ির দরজার কাছে নিয়ে গেলেন এবং নিজে রহমত সাহেবকে ডেকে দিলেন। গাছ তলায় বসে থাকা লোকটি নিঃসন্দেহে ভালো ব্যবহারের পরিচয় দিলেন।

ভালো ব্যবহারের চর্চা বাল্যকাল থেকে হওয়াটা খুব জরুরী। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে পারিবারিক শিক্ষার ভূমিকাই মুখ্য।ভালো ব্যবহারের শিক্ষা কৈশোরকালে না পেলে ওই শিশু পরবর্তী সময়ে সদাচরণ রপ্ত করতে পারে না।

শিশু-কিশোরকে ছোটবেলা হতে রাস্তার উপরে পড়ে থাকা ইটপাটকেল, ডালপালা ,বা কলার খোসা ইত্যাদি কুড়িয়ে নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থানে ফেলার মতো ভালো কাজে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে পারলে সে শিশুই একদিন হয়ে উঠতে পারে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, মাদার তেরেসার মত মানব দরদী মানুষ।

পৃথিবীকে শান্তিময় করে তুলতে ভালো ব্যবহারের বিকল্প নেই। পরস্পর পরস্পরের সাথে ভালো ব্যবহার প্রদর্শন করলে সমাজ হয়ে উঠবে শান্তিময়। মানুষের সাথে মানুষের গড়ে উঠবে আস্থার সম্পর্ক। এই প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীতে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে হয়ে উঠবে পরস্পরের সহযোগী। আসল ব্যাপার হলো, মানুষের মধ্যে ভালো ব্যবহারের ঘাটতি থাকলে মানুষ নামের সার্থকতা থাকেনা। তাই ভালো ব্যবহার হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ যা তার অবর্তমানেও বিদ্যমান থাকে।


মোঃ মজিবুর রহমান

সহকারী প্রধান শিক্ষক
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ