Saraswati Puja: সরস্বতী পূজার শুভক্ষণ ও পুজার সময় কি কি করা উচিত নয়।
সরস্বতী হলেন হিন্দুধর্মে জ্ঞান,সংগীত,শিল্পকলা, বাক্য,প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী।সরস্বতী,লক্ষ্মী ও পার্বতী হিন্দুধর্মে ‘ত্রিদেবী’ নামে পরিচিত।
দেবী রূপে সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত হিন্দুধর্মে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবীর স্থান অধিকার করে রয়েছেন। সরস্বতী সাধারণত দ্বিভূজা বা চতুর্ভূজা মূর্তিতে পূজিতা হন। দ্বিভূজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক; চতুর্ভূজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, অক্ষমালা, কলস ও বীণা। হিন্দুধর্মে এই প্রত্যেকটি বস্তুরই প্রতীকী অর্থ রয়েছে। হিন্দুদের একাংশ সরস্বতীর পূজা করেন শ্রীপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমীর। এই দিনটিতে শিশুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের(প্রথম অক্ষর শিক্ষার অনুষ্ঠান) আয়োজন করা হয় । পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীরাও সরস্বতীর পূজা করেন। এছাড়া বৌদ্ধদের কোনও কোনও সম্প্রদায়েও সরস্বতী পূজা প্রচলিত।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো পালিত হয়। এই তিথিকে বসন্ত পঞ্চমী বলা হয়। শাস্ত্রে এদিন সরস্বতী পুজোর বিধান রয়েছে। মনে করা হয়,এদিনই বিদ্যার দেবী সরস্বতী অবতরিত হয়েছিলেন। চলতি বছর বিশেষ সংযোগে বাগদেবীর আরাধনা হবে।
তিথিঃ
পঞ্চমী তিথি শুরু- ৫ ফেব্রুয়ারি (ইংরেজি মতে) রাত ৩ টে ৪৭ মিনিটে।
পঞ্চমী তিথি সমাপ্ত- ৬ ফেব্রুয়ারি(ইংরেজি মতে) রাত ৩টে ৪৬ মিনিটে।
পুজোর শুভক্ষণঃ-
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং সকাল ৬টা ৪৩ মিনিট থেকে ১২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত সময় সরস্বতী পুজোর জন্য সর্বাধিক শুভ। চলতি বছর সরস্বতী পুজোর দিন একাধিক শুভ যোগ থাকছে। মকর রাশিতে সূর্য ও বুধের উপস্থিতির ফলে বুধাদিত্য যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। চারটি রাশির মধ্যেই সমস্ত গ্রহ উপস্থিত থাকায় শুভ কেদার যোগ সৃষ্টি হচ্ছে বসন্ত পঞ্চমীর দিনে। শুধু তাই নয়, শুভ ও কাজে সিদ্ধি প্রদানকারী সিদ্ধ, সাধ্য ও রবি যোগের ত্রিবেণী সংযোগও সৃষ্টি হচ্ছে এদিন।
দেবী সরস্বতী সত্ব গুণ সম্পন্ন বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে এ দিনটিকে অক্ষরাম্ভবিদ্যারম্ভের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। সুরের অধিষ্ঠাত্রী হওয়ার তাঁর নাম হয় সরস্বতী।
উল্লেখ্য,বসন্ত পঞ্চমীকে দোষ মুক্ত দিন গণ্য করা হয়। এ কারণে এই দিনটিকে স্বয়ং সিদ্ধ ও অবুঝ মুহূর্তও বলা হয়। এ দিন বিবাহ, যজ্ঞোপবিত, গৃহ প্রবেশ করা যায়। আবার গাড়ি কেনারও শুভ দিন এটি।
বসন্ত পঞ্চমী কি নামে পরিচিত?
বসন্ত পঞ্চমী সরস্বতী পূজা নামেও পরিচিত। এই দিনটি বসন্তোৎসবের সূচনাও করে। আমি আপনাকে বলে রাখি, এই বসন্ত উৎসব হোলি পর্যন্ত চলে, শুধু তাই নয়, এই উৎসবটি মদনোৎসব হিসাবেও পালিত হয়। এছাড়া বসন্ত পঞ্চমীকে জ্ঞান পঞ্চমী বা শ্রী পঞ্চমীও বলা হয়।
অবাঙালীদের মধ্যে এই দিন থেকে ছোট বাচ্চাদের পুজো করা হয়। এছাড়াও তারা কোনও নতুন কাজ শুরু করা, বাচ্চাদের মুণ্ডন, অন্নপ্রাশন সংস্কার, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদির নানান মাঙ্গলিক কাজ এই সময় করে থাকে। কারণ বসন্ত পঞ্চমী তারা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন।
বসন্ত পঞ্চমীতে যে কাজগুলো করা যাবে নাঃ-
হলুদ রং মা সরস্বতীর খুব প্রিয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে যখন সরস্বতী মা অবতারণা করেছিলেন, তখন ব্রহ্মাণ্ডে একটি লাল, হলুদ এবং নীল আভা ছিল এবং হলুদ আভা প্রথম দেখা গিয়েছিল, যার কারণে এটি ধর্মীয় বিশ্বাস করা হয় যে মা সরস্বতীর হলুদ রঙ প্রিয়।
(১) শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে বসন্ত পঞ্চমীর দিনে হলুদ রঙের পোশাক পরা শুভ। এছাড়া এই দিনে ভুল করেও কালো বা লাল রঙের পোশাক পরা উচিত নয়।
(২) বসন্ত ঋতুও বসন্ত পঞ্চমীর দিন থেকে শুরু হয়। এমন অবস্থায় গাছ-গাছালিতে নতুন কুঁড়ি গজাতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে এই বিশেষ দিনে গাছ-গাছালি কাটা উচিত নয়।
(৩) যে বসন্ত পঞ্চমীর দিনে স্নান না করে কখনও খাবার খাওয়া উচিত নয়,এটি করা অশুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনে সবাইকে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সকালে উঠে স্নান করে দেবীর পুজো করা উচিত।
(৪) বসন্ত পঞ্চমীর দিন বাড়িতে কেউ মাংস রান্না করবেন না। কারণ এই দিন জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়।
(৫) পুজোর দিনে কারও খারাপ ভাবা বা খারাপ করা উচিত নয়।
শিক্ষা,শিল্পকলা এবং সঙ্গীতের দেবী হলেন সরস্বতী। আমাদের মনের অন্ধকার দূর করে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য আমরা ঘরে ঘরে দেবী সরস্বতীর পুজো করে থাকি। সঠিক বিধি অনুসারে পুজো করলে দেবীর কৃপা লাভ করা যায়। তবে শাস্ত্র অনুযায়ী কিছু কাজ আছে, যা সরস্বতী পুজোর দিন একেবারেই করতে নেই। এর ফলে বিদ্যার দেবী আমাদের ওপর রুষ্ট হন এবং জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আসুন দেখে নেওয়া যাক সরস্বতী পুজোর দিন আর কোন কোন কাজগুলো করা যাবে নাঃ-
(১) সরস্বতী পুজোর দিন কোনও ভাবেই ফসল কাটা উচিত নয় বা বাড়ির যে কোনও গাছ কাটা উচিত নয়। শাস্ত্রে মানা হয় যে, এই সময় গাছেরাও উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। তাই এই দিন বাড়িতে গাছ লাগানো খুব শুভ বলে মনে করা হয়।
(২) সরস্বতী পুজোর দিন হাত বা পায়ের নখ এবং চুল ভুলেও কাটতে নেই। যদি খুব প্রয়োজন হয়,তা হলে আগের বা পরের দিন কেটে নেওয়া যেতে পারে।
(৩) সরস্বতী পুজোর দিন সেলাইয়ের কাজ করতে নেই।
(৪) পুজোর সময় যে প্রদীপ জ্বালানো হয়,তা যেন কোনও ভাবে পুজো চলাকালীন নিভে না যায় সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুজো চলাকালীন প্রদীপ নিভে যাওয়া অমঙ্গলের সূচনা করে।
(৫) পুজোর সময় দেবী সরস্বতী আমাদের জিহ্বায় অবস্থান করেন। তাই কাউকেই কুকথা বলতে নেই। এ ছাড়া এই দিন ক্রোধ সংবরণ করতে হয়।
(৬) সরস্বতী পুজোর দিন হলুদ বা সাদা বস্ত্র পরিধান করতে হয়,অন্য রঙের বস্ত্র পরিধান করতে নেই।