গল্পঃ চোখে চোখ পড়ার পরে
হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে ফরিদ সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেল।বিছানা ছেড়ে উঠে এক গ্লাস পানি খেলেন তিনি।পাশে স্ত্রী শর্মিলা বেগম গভীর ঘুমে মগ্ন।কান্নার শব্দ এখন আর শোনা যাচ্ছে না। প্রায়ই ফরিদ সাহেবের এরকম কান্নার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙ্গে। বাড়ির চারপাশ ভালভাবে ঘুরে দেখলেন।কিন্তু কান্না কোন আলামত খুঁজে পেলেন না। মনে মনে ভাবতে লাগলেন সেকি মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে নাকি দিনে দিনে। কারো সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপও করা যাচ্ছে না।
নিঃসন্তান দম্পতি তারা। বড় বোনের পিতৃ-মাতৃ হারা এক ছেলেকে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করছেন। তার স্ত্রীর বড় একটা অপারেশন হওয়ার পর সেই আর মা হতে পারবেনা বলেছেন ডাক্তার। ফরিদ সাহেবকে তার স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলেছেন কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে সারা জীবন নিঃসন্তান হিসেবেই কাটিয়ে দিব। তারপরও দ্বিতীয় বিয়ে করব না।
ফরিদ সাহেব একটা সরকারি কলেজের ইতিহাস এর সহকারী অধ্যাপক। পড়ান খুবই ভালো। কিন্তু চেংরা ছাত্রছাত্রীরা তাকে আটকুরা বলে মাঝে মাঝে ক্ষ্যাপান। তিনি যে নিঃসন্তান ঠিক তখনই তা তার মনের ভিতরে গভীর ভাবে নাড়া দেয়। কষ্ট ঠিক তখনই পান তিনি। মাঝে মাঝে মন চায় স্বেচ্ছায় অবসর নিতে। কিন্তু অবসরে গিয়ে সময় পার করবেন কিভাবে। এটা ভেবেই তিনি আবার তুমি যান।সন্তান না থাকলেও তিনি বড় বোনের ছেলেকে পিতৃস্নেহে বড় করে তুলেছেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। এদেশের একজন নামকরা ডাক্তার সে। বিয়ে-শাদী এখনো করেননি। ওর নাম ডাক্তার আসলাম। বাংলাদেশের ১০জন বড় শিশু ডাক্তারের মধ্যেই তিনি একজন। ফরিদ সাহেব প্রায়ই বিয়ের কথা বলেন আসলামকে। আসলাম বলে, মামা তোমরা মেয়ে দেখো।তারপর সব ঠিকঠাক করো আমি একটা সময়ে গিয়ে কবুল বলে বউ নিয়ে চলে আসব ।
আসলাম ফরিদ সাহেবের স্ত্রী কে মা বলে ডাকে। যদিও তার মামি তারপরও মা বলেই ডাকেন।মাত্র তিন বছর বয়সে আসলামের মা-বাবা মারা যান। ফরিদ সাহেব বোনের ছেলেকে কোলে করে নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে।স্ত্রীকে বললেন, আজ থেকে এই ছেলেকে তোমার সন্তানের মতো লালন পালন করে মানুষ করো। শর্মিলা বেগম আসলামকে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেছেন। মায়ের অভাব আসলাম কখনো বুঝতে পারেননি।
ফরিদ সাহেব তার কলেজের এক ছাত্রীকে আসলামের জন্য পছন্দ করেছেন। মেয়েটির নাম রোকেয়া। খুব সুন্দর ও লাজুক স্বভাবের মেয়েটি। আসলামের সাথে ওকে খুব সুন্দর মানাবে। ঠিকানা সংগ্রহ করে একদিন ফরিদ সাহেব স্ত্রী ও আসলামকে নিয়ে রোকেয়ার বাড়িতে হাজির হলেন । রোকেয়ার বাবার সাথে কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে তিনি আত্মীয়তা করতে রাজি হলেন। আড়াল থেকে রোকেয়া কথা শুনছিল। যখনই আসলামের চোখে চোখ পড়ল রোকেয়া লজ্জা পেয়ে ঘরের ভিতরে চলে গেলো। আসলাম মিটমিট করে হাসতে লাগলো। সত্যিই মেয়ে টি খুব সুন্দর।
…………………………………..