Akhtaruzzaman - (Barguna)
প্রকাশ ১৮/০১/২০২২ ০৪:৩০পি এম

Injection: ৭০ টাকার ইনজেকশন তিন হাজার টাকায় বিক্রি বরগুনায়

Injection: ৭০ টাকার ইনজেকশন তিন হাজার টাকায় বিক্রি বরগুনায়
প্রতারণা করে রোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন একজন চিকিৎসক। বরগুনার ডক্টরস কেয়ার ক্লিনিক এন্ড হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৭০ টাকার ইনজেকশন তিন হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের নাম মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাব।

তিনি বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোসার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ডাঃ মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাব বরগুনার কলেজ রোডের ডক্টরস কেয়ার ক্লিনিক এন্ড হাসপাতালে প্রতি মাসের দুইবার রোগী দেখেন। এই চিকিৎসকের আগমন উপলক্ষে বরগুনার নিয়মিত মাইকিংও করা হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আবদুর রাজ্জাক ও রিয়াজুল ইসলাম নামের দু'জন ভুক্তভোগী সময় নিউজের কাছে সাইনোকর্ট (Cynocort) নামের ৭০ টাকার ইনজেকশন তাদের কাছে তিন হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ করেন। তবে ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইনজেকশটির দাম ৭০ টাকা। যদিও ওই চিকিৎসকের দাবি, ইনজেকশনটির দাম কম।

ইনজেকশনটি পুশ করতে তিন হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আর যদি রোগী গরীব হয়, তাহলে ফ্রিতেও ইনজেকশন পুশ করা হয়। অভিযোগকারী আবদুর রাজ্জাক বরগুনা সদর উপজেলার লাকুরতলা এলাকার বাসিন্দা। আর অপর অভিযোগকারী রিয়াজুল ইসলাম সদর উপজেলার কুমড়াখালী এলাকার বাসিন্দা।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, "আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। তার মেরুদন্ড এবং পায়ে ব্যাথা। তাই শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ডক্টরস কেয়ার ক্লিনিক এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসক মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাবের কাছে যাই। এরপর ছয় 'শ টাকা ভিজিট দিয়ে আমার স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাব আমার স্ত্রীকে দেখে দুইটি এক্স-রে এবং রক্তের জন্য তিনটি টেস্ট দেন। যার জন্য ব্যয় হয় ১৮ শ'টাকা।" এরপর রিপোর্ট নিয়ে ফের ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি আমার স্ত্রীকে সাইনোকর্ট (Cynocort) নামের একটি ইনজেকশন পুশ করা কথা বলেন। ইনজেকশনটির দাম তিন হাজার টাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পুশ করার জন্য কোন চার্জ দিতে হবে না। পরে আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি বাহির থেকে ইনজেকশনটি কিনে পুশ করতে চাই। এজন্য ইনজেকশনটি নাম লিখে দিতে বললে তিনি রাজি হননি। তাই বিকাশের মাধ্যমে টাকা চান তিনি। পরে আমি বিকাশের মাধ্যমে ডাক্তারের দেয়া ০১৯১৯১---৬৬৭ এই নম্বরে তিন হাজার টাকা দেই। এরপর ডাক্তার নিজেই আমার স্ত্রীকে ইনজেকশন পুশ করেন।"

পরে আমি ফার্মেসিতে গিয়ে ইনজেকশনটির দাম জেনে অবাক হয়ে যাই। একজন চিকিৎসকের এ কেমন প্রতারনা তা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আমি এর বিচার চাই। মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, "শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে আমি আমার স্ত্রীর বোনকে ডাঃ মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাবের কাছে যাই। এরপর ছয় 'শ টাকা ভিজিট দিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। এরপর তিনি একটি এক্স-রেসহ চারটি টেস্ট দেন। এ টেস্টের জন্য ব্যয় হয় এক হাজার ৭৫০ টাকা " পরে বিকেল দুইটার দিকে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাঃ মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাবের কাছে গেলে আমার স্ত্রীর বোন মোসাঃ পারভীন আক্তারকে সাইনোকর্ট (Cynocort) নামের ইনজেকশন পুশ করতে হবে বলে জানান।

এ ইনজেকশনের দাম জানতে চাইলে তিনি এর দাম তিন হাজার টাকা বলে জানান। পরে আমি নগদ তিন হাজার টাকা দিলে ডাক্তারের টেবিলে থাকা ইনজেকশন ডাক্তার নিজেই পুশ করে দেন। এরপর বাহিরে ফার্মিসিতে গিয়ে আমি এই ইনজেকশনের দাম ৭০ টাকা জানতে পারি। একজন ডাক্তারের এমন প্রতারণা করতে পারে, তা আমি ভাবতেই পারি না। আমি এমন প্রচারনা বিচার চাই।" এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মী আবু জাফর মোঃ সালেহ বলেন, একজন চিকিৎসকের নিজ চেম্বারে ঔষধ বিক্রি করার কথা না। তার উপরে রোগীদের জিম্মি করে ৭০ টাকা মূল্যের ঔষধ তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা অমানবিক এবং অনৈতিক। আমি মনে করি, এ ধরনের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।

এ বিষয়ে চিকিৎসক মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাব মোবাইল ফোনে সময় সময় নিউজকে বলেন, "সাইনোকর্ট (Cynocort) নামের ইনজেকশনটির দাম কম। বাহিরে এটি ৫/৬ শ'টাকায় পুশ করা হয়। তবে এটি পুশ করতে সিনিয়র চিকিৎসকরা তিন হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। আবার গরীব রোগীদের ফ্রিতেও পুশ করা হয়।" এ বিষয়ে ডক্টরস কেয়ার ক্লিনিক এন্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীম বলেন, "সাইনোকর্ট (Cynocort) নামের ইনজেকশনটির দাম ৭৫ টাকা। এটার দামসহ পুশ করার জন্য ডাঃ মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাব তিন হাজার টাকা নেন। এই ইনজেকশন তার কাছেই থাকে।

এই ইনজেকশনের কথা ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করা হয় না। তবে এই টাকার কোন ভাগ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পায় না।" মোঃ শিহাব উদ্দিন শিহাব একজন সিনিয়র চিকিৎসক। তাই নাম পরিচয় প্রকাশ করে এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বরগুনায় কর্মরত এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, এই ইনজেকশনে পুশ করার জন্য ঢাকাতেও ৬ শ'থেকে ৮ শ'টাকা নেয়া হয়।

সিনিয়র এবং উচ্চ ডিগ্রিধারী চিকিৎসরাও এ ইনজেকশন পুশ করার জন্য এক হাজার টাকার বেশি নেয় বলে জানা নেই। এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ মুহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, "বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। অভিযোগের যদি সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ