Ali imran - (Tangail)
প্রকাশ ১৮/০১/২০২২ ০৩:২৭পি এম

"এক-এগারোতে বিএনপির রাজনীতি"

"এক-এগারোতে বিএনপির রাজনীতি"
এক-এগারো বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের জন্য একটি কালো সময়।এখনো যখন ১/১১ নিয়ে কথা বলে রাজনীতিবিদরা তাদের ভিতর ক্ষোভ কিংবা একটি অতংকের ভাব লক্ষ্য করা যায়।
১/১১ তে মূলত সেনা সমর্থিত সরকার অন্তর্বতী কালীন সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। যার ফলে ঢালাও ভাবে গ্রেফতার হতে থাকে একের পর এক দুর্নীতি গ্রস্থ রাজনীতিবিদগণ।দুর্নীতি গ্রস্থ রাজনীতিবিদরা আটক হলেও কিছু কিছু রাজ নেতারা আটকের কারণ ছিল সেনা ও গোয়েন্দাদের বিশেষ কারণে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপি আজ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাহিরে।অনেকের ধারনা বিএনপির আজ এই দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকার মূল কারণ ১/১১। এই ১/১১ এর মধ্য দিয়ে ইমিডিয়েট প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাক রাজনীতি থাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

১/১১ ঘটে যাওয়ার আগে বাংলাদশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চলছিল ডামাডোল।আওয়ামীলীগের বক্তব্য ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দ্বারা নির্বাচন হলেও এই নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না।সে সময়ের বিরোধীদলের দাবি ছিল সংবিধান মোতাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন তো হবেই সাথে তাদের পছন্দ এবং তাদের কাছে যদি মনে হয় এই মানুষটি নিরোপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠীত করতে পারবে শুধু তখনই আওয়ামীলীগ সহ তথা ১৪ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে।

২০০৬ সালের শেষের দিক চার-দলীয় সরকারের সময় শেষ অক্টোবর মাসে ২৯ অক্টোবর।সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ এর বিধান অনুযায়ী এই সময়ের মধ্য ক্ষমতা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ন্যস্ত করতে হবে।সেই অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা সর্বশেষ যে বিচারপতি অবসর গ্রহন করেছে তিনি হবেন।

যদি কোনো কারনে বিচারপতিরা ক্ষমতা নিতে না চান তবে সব দলের মত অনুসারে অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবে।যদি তাও না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি এই আসন গ্রহন করবে।
তৎকালীন পরিস্থিতি এমন হয়ে ছিল যে রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা গ্রহন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না।সংবিধান অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ১০ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়।কিন্তু তখনও সন্তুষ্ঠ ছিল না বিরোধীদল আওয়ামী-লীগ চলছিল একের পর এক হরতাল,আন্দোলন।

বিরোধীদল আওয়ামী-লীগের তান্দবে এবং সেনাবাহিনী প্রধান,সেনা গোয়েন্দা প্রধানদের কৌশলে দেশে জরুরি অবস্থা জারী করতে বাধ্য হয় রাষ্ট্রপতি।বিভিন্ন তথ্য এবং সে সময়ের সেনা প্রধান মঈন-ইউ-আহমেদ লিখিত বই অনুযায়ী সেনা, বিমান ও নো-বাহিনী বাধ্য করেছিল রাষ্ট্রপতি কে জরুরী অবস্থা জারী করা এবং তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা।তার পরবর্তীতে গঠিত হয় নয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফকরুদ্দীন আহমেদ কে প্রধান উপদেষ্টা করে।উপদেষ্টা ফকরুউদ্দীন হলেও পুরো বিষয়টা পরিচালনা করছিল সে সময়কার সেনা প্রধান জেনারেল মঈন-ইউ-আহমেদ সমর্থিত সেনা কর্মকর্তারা।হয়তো জাতিসংঘ এবং পশ্চিমারা চাপ না দিলে তারা পরিকল্পনা করছিল যে এই তত্ত্বাবধায়কের সময় আরো বর্ধিত করে ক্ষমতা ধরে রাখতে।

মঈন-ইউ-আহমেদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দ্বারা নিযুক্ত হন।বিরোধীদল সবাই ভেবেছিল মঈন আহমেদ চার দলীয় সরকারের খুবই কাছের লোক।
সে সময় বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছের লোক এবং অনুচর ছিল যারা তার সাথে বেঈমানি করেছে।এই অনুচর সরকারী আমলা যেমন ছিল ,তেমন ছিল বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রীবৃন্দ।
তারা একদিকে যেমন তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে ব্যস্ত ছিল ঠিক তেমনই তারা বেগম জিয়াকে জাতিয়তাবাদী দল আবার ক্ষমতায় আসবে এই গান গাচ্ছিল।বেগম জিয়ার এই মানুষ গুলো ছিল খুব কাছের মানুষ মূলত জিয়া বিশ্বাসই করতে পারেনি তাদের এই কাছের মানুষরাই এই নীল নকশা আঁকছে।সূত্রের মাধ্যমে জানা যায় মঈন কে সেনা প্রধান করার জন্য রেফারেন্স করেছিল খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ সিকান্দারের মতে।

বেগম জিয়াকে সহ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও সরিয়ে দিয়ে তৃতীয় কোন শক্তিকে গদিতে বসাতে।সে সময় বিএনপির কুটনৈতিক কৌশল ছিল দুর্বল।কিন্তু এই দিকে শেখ হাসিনার কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিল ভালো বিশেষ করে ভারতীয় হাইকমিশন এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে।

যার ফলে আওয়ামী-লীগ অনেক বিষয় আঁচ করতে পারলেও বিএনপি বিষয় গুলো গুরুতহীন ভেবে এড়িয়ে গিয়েছেন।যার ফল বিএনপি ১৫ বছরে ধরে ক্ষমতার বাইরে।

বিএনপির ১/১১ এ রাজনৈতিক ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল দলের ভিতের বিভাজন।বিএনপির তৎকালীন কিছু নেতা এবং বহিষ্কৃত কিছু নেতা চাচ্ছিল বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে দলকে দু-টুকরো তে ভাগ করতে।২০০৬ সালের প্রথম দিকে তারা কিছুটা সফলও হয়।কিন্তু জিয়াকে বিএনপির রাজনীতি থেকে সরিয়ে ফেলার নকশা আঁকা হয় ১/১১ তে।

শুধু বিএনপিতে নয় এই কৌশল করা হইয়েছিল আওয়ামী-লীগেও,কিছু নেতা আওয়ামী-লীগের চাচ্ছিল শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিতে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি ছিল মূলত আঃলীগ এবং জামায়াত-ই-ইসলামের। তাদের আন্দোলনের মুখে সে সময় বিএনপি তাদের এই দাবি মেনে নেয়।
২০১৪ এর মতো সংবিধান রক্ষার মতো একটি নির্বাচন দিয়ে ১৯৯৬ তে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিল উত্থাপন করে সংবিধানে সংশোধনী নিয়ে আসে এবং সে বছর আবার নির্বাচন দিয়ে আঃলীগ সরকার ক্ষমতায় আসে।

২০০৭ এর ১/১১ এর আগে বিএনপি বা জিয়া সরকার তখনও সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিল তারা চাইলেও হয়তো সংবিধান সংশোধনের করে নিজের ইচ্ছা মতো নির্বাচন করতে পারতো।

কাছের মানুষদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং দলীয় নেতাদের বিশ্বাসের কারণে বেগম জিয়া সহ বিএনপির এমন অবস্থার পরিণতি হয়েছে। ১/১১ এর মতো ভুল যেন না হয় তার জন্য দলকে আরো সুসংগঠিত এবং বলিষ্ঠ নেতৃতের বিকল্প কিছুই নেই।


লেখাঃ আলী ইমরান।
শিক্ষার্থী কলামিষ্ট,
আইন বিভাগ,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ইমেইলঃ [email protected]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ