একজন রিকশা চালকের ভালোবাসার গল্প
ভালো দিনের শেষ অংশ টা হয়তো খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায় !পড়ন্ত বিকেল হয়তো একেই বলে !
আর দিনের শেষ ভাগের এই রংটাই বুঝি গোধুলী !
রাস্তায় বসে গাঢ়ো কমলা রঙ এর অস্তায়মান সূর্য টা দেখছিলাম ।মনে হচ্ছে সূর্য্যি মামা বুড়িয়ে গেছে , তাকিয়ে আছি অবলিলায় । চোখে বিন্দু মাত্র আঁচ লাগছে না ।কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তার সৌন্দর্য অবলোকন করলাম । ঠিক তখনি পাশে বসে থাকা মিদুল বলে উঠলো মাহফুজ এবার চল ঘুরে আসি। আমিও কিছু না বুঝে উঠে পরলাম। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকতেই একটা রিক্সা আসলো আমরা দুই জন রিক্সায় উঠলাম.. কিছুদূর যেতেই রিকশা ওয়ালা জিজ্ঞাস করছে ভাই আপনার কোথায় যাবেন ?? রিকশা ওয়ালা এমন কথা শুনে আমি মিদুলের দিকে তাকিয়ে হাসছি মিদুল আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে সত্যিই তো আমরা কোথায় যাবো রিকশা ওয়ালাকে বলাই হয়নি
তখন মিদুল বলতে লাগলো মামা এই শহর টা আপনার অনেক পরিচিত তাই না?? রিক্সা ওয়ালা বললো হ্যাঁ আমি এই শহরে ৬ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি.. আমি বললাম তাহলে মামা সুন্দর কোনো গলিতে নিয়ে চলেন যে খানে টং চায়ের দোকান আছে প্রাকৃতিক সুন্দর পরিবেশ পাওয়া যাবে..রিকশা ওয়ালা রিকশা টা থামিয়ে চিন্তা করে আমাদের কে পিছনে ঘুরিয়ে নিয়ে আসলো. একটি গলি দিয়ে পুড়ো গ্রামের মত একটা মুঠো পথে নিয়ে গেলো। যেতে যেতে আমার এতক্ষণ মামার সাথে ভালো গল্প জমিয়ে নিলাম..উনিও মন খুলে আমাদের সাথে জীবনের সব কিছু শেয়ার করতে লাগলো।
রিক্সা চালক মামা টা বলতে লাগলো ।বিয়ে করেছিলাম এক বছর আগে আমার মতই এক গরীবের মেয়েকে বউ করে এনেছিলাম আমি।
অভাবের সংসারটা খুব সুন্দর করে
সাজিয়ে নিয়েছিলো ও।
বুঝতে পারি বউ আমায় খুব ভালবাসে।
আমি যখন রিকশা নিয়ে বাড়ি
ফিরি,ও আমার জন্য গোছলের পানি তুলে দেয়।
মাঝেমাঝে আমিও অবশ্য তুলে দেই। বাড়িতে কারেন্ট নাই,খেতে বসলে গরমের দিন
ও পাখা দিয়ে বাতাস করে।
গরমের রাতে দুজনে অদল বদল করে পাখা দিয়ে
বাতাস করি,ভবিষ্যৎটাকে
সাজানোর গল্প করি দুজনে।
গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে
যেতাম
বুঝতে পারতামনা। রিক্সায় আপনাদের মত বড়বড় সাহেবরা তাদের
বউকে নিয়ে উঠত।
দুজনে মিলে অনেক গল্প করত।
সাহেবদের কাছে শুনতাম তারা
যেদিন বিয়ে করেছে সেদিন আসলে তারা নাকি
অনুষ্ঠান, পার্টি না
কি জানি করে ।এই সব আমার জানা
নেই।
যখন শুনতাম আমারো ইচ্ছে করত বউকে
একটা শাড়ী কিনে দিতে।বউকে যে খুব
ভালবাসি আমি। কিন্তু পারিনা।
অভাবের সংসার, দিন আনি দিন খাই।
তাই একটা মাটির ব্যাংক কিনেছিলাম। ওটাতে রোজ
দু'চার টাকা করে ফেলতাম।
দেখতে দেখতে অভাবের সংসারে
আজ একটা বছর হয়েগেল। আজ সকালে
রিক্সা নিয়ে বের হবার আগে বউ যখন
রান্না ঘরে গেল তখন বউকে না জানিয়ে লুকিয়ে
রাখা মাটির ব্যাংকটা বের করে ভেঙ্গে
দেখলাম সেখানে
প্রায় ৪৮০ টাকা হয়েছে।
বাসা থেকে বের হবার আগে বউকে
বলেছিলাম, আজ বাড়িতে ফিরতে দেরী হবে।
বউ মাথা নাড়ে,বলে ভালো কইরা
থাকবেন। চলে আসলাম রিকশা নিয়ে।
সারাদিন রিক্সা চালিয়ে সন্ধ্যায় বউয়ের জন্যে একটা শাড়ী কেনার মার্কেটে যামু।
তখন হঠাৎ মিদুল বলে উঠলো মামা আমাদের কে নিয়ে যাবেন মার্কেটে মাহফুজের পছন্দ খুব সুন্দর আপনার বউয়ের জন্য খুব সুন্দর একটি শাড়ী পছন্দ করে দিবে নে..
রিকশা চালক মামা টা বলতে লাগলো সাহেব আমার কাছে তো এত টাকা নাই যে বড় মার্কেট থেকে শাড়ি কিনমু..তখন আমি বললাম চলেন মামা মার্কেট যাই আমরা..অনেক দিন ধরে মার্কেট যাই না চলেন। আমার দুই জন মিলে মামার বউয়ের জন্য মোটামুটি ভালো একটি শাড়ী কিনে দিলাম..মামার পছন্দের.. ঐই রিকশা চালক মামা টা আমাদের নেওয়া শাড়ি টা কোনো মতেই নিতে চাচ্ছিলো না অনেক জোড়াজুড়ি করে দিয়েছি..সাথে ভাড়া টাও
বিঃদ্রঃ ভালবাসায় বেঁচে
থাকুক আমাদের সবার হৃদয়ের
বর্তমান সময়ে শতশত কোটি টাকা হলেও এই রকম ভালোবাসা পাওয়া যাই..
লেখকঃ মাহফুজুর রহমান