শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৫ বছরে হত্যার রক্তাক্ত পরিসংখ্যান
শেখ হাসিনার সরকারের শেষ ৫ বছর (২০১৯-২০২৩) ছিল এক ভয়ঙ্কর সময়। এই সময়ের অপরাধ পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আঁতকে উঠতে হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৯ জনের বেশি মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন, যা মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ হাজারের বেশি। এই ভয়াবহ চিত্রের পাশাপাশি আরও ২,৫০০-এর বেশি অপহরণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের হাজারো ঘটনা ঘটেছে।
অপরাধের ভয়াল চিত্র
সরকারি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী:
খুন: ১৬ হাজারেরও বেশি।
অপহরণ: প্রায় ২,৫০০।
ছিনতাই: ৯,৯৫৫টি।
ডাকাতি: ১,৬০০টি।
মানবাধিকার কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাস্তব অবস্থা ছিল এই পরিসংখ্যানের চেয়েও ভয়াবহ। অনেক হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনা সরকারি নথিভুক্ত হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
সাবেক পুলিশ প্রধান নুরুল হুদার মতে, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিমাত্রায় ব্যবহার করেছে। তার ভাষায়, "নীতিহীন শক্তির প্রয়োগে অপরাধের মাত্রা বেড়েছে।"
মানবাধিকারকর্মী নূর খান অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডের বড় অংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথাকথিত ক্রসফায়ার বা নির্যাতনের ফল। তিনি বলেন, "পুলিশের পরিসংখ্যানে সব মৃত্যু দেখানো হয়নি। আরও বহু ঘটনা আড়ালে রয়ে গেছে।"
সমাজের ওপর প্রভাব
এই সহিংসতার প্রভাব শুধু হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সমাজে এক ধরনের আতঙ্ক এবং অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক মদদ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি সক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব
মানবাধিকারকর্মীদের মতে, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। নূর খান আরও বলেন, "কিশোর গ্যাং এবং সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।"
কেন এই তদন্ত জরুরি?
দেশে আইন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই ৫ বছরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং ভুক্তভোগী পরিবারদের ন্যায্যতা প্রদান করাই এই তদন্তের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনার শাসনামল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভীতিকর অধ্যায় হয়ে থাকবে, যা শুধু শাসনব্যবস্থার নয়, পুরো সামাজিক কাঠামোর গভীর ক্ষত বহন করছে। বর্তমান সরকার এবং জনগণের দায়িত্ব হলো এই অন্ধকার অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।