রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২০/১২/২০২৪ ১১:১৫এ এম

স্মার্ট বাংলাদেশের নামে ২৯ হাজার কোটি টাকার লুটপাট

স্মার্ট বাংলাদেশের নামে ২৯ হাজার কোটি টাকার লুটপাট
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' থেকে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলোতে ভয়াবহ আর্থিক লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার বিপুল বাজেট বরাদ্দ করা হলেও এর সঠিক ব্যবহার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

সম্প্রতি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুনত্বের সুযোগ নিয়ে এবং অভিজ্ঞতার অভাবে, প্রকল্পের নামে বিপুল অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ তদন্তে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ তদন্তে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যা লুটপাটের সংজ্ঞা পুরোপুরি নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, "আমরা দেখেছি, পাঁচ টাকার কাজ ২০ টাকায় করা হয়েছে। এমনকি এমন স্থানে ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে যেখানে তা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।"

অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আইসিটি বিভাগ আরও একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কিছু প্রকল্প সম্পূর্ণ বন্ধ করার পাশাপাশি উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু প্রকল্প পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

৫৫টি প্রকল্পে ২৮ হাজার কোটি, ফলাফল শূন্য!
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আইসিটি বিভাগের অধীনে মোট ৫৫টি প্রকল্প নেওয়া হয়, যার বাজেট ছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ৩৪টি কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৭৩ কোটি টাকা। তবে এসব ব্যয়বহুল প্রকল্পের সাফল্য ছিল অত্যন্ত নগণ্য। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনেক বড় প্রকল্প পাস করা হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

কেনাকাটায় অতিরিক্ত ব্যয় ও প্রকল্পের অনিয়ম
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পগুলোতে কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার অধিক মূল্যে কেনা হয়েছে এবং অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে একটি প্রকল্পে ৫২১ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও তা খরচ করা হয়েছে ৭৭৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের এবং তাদের পছন্দের সরবরাহকারীদের আর্থিক সুবিধা দিতেই এসব প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তরুণদের প্রশিক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় অ্যাপ ও গেম উন্নয়ন প্রকল্পেও একই চিত্র দেখা গেছে।

ইডিসি প্রকল্পে ৫৯২৩ কোটি টাকার দুর্নীতি
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধীনে নেওয়া 'ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন' (ইডিসি) প্রকল্পটি সবচেয়ে বড় দুর্নীতির উদাহরণ। ২০২১ সালে শুরু হওয়া ৫৯২৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে মাত্র ২০০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

নতুন পরিকল্পনা: ভবিষ্যৎ কী?
প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। বর্তমান সরকার প্রকল্পগুলোতে কেনাকাটার কাজ বন্ধ রেখেছে এবং ভবিষ্যতে সেগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করে পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

এই ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য জনগণকে হতবাক করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এ ধরনের দুর্নীতি বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জনগণের টাকার অপচয়ের এ চিত্র সংশোধনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

[স্মার্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: প্রকৃত উন্নয়ন নাকি আরও লুটপাট?]

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ